ঢাকা ০৯:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৪দিনের উত্তেজনার পর নবীগঞ্জে কয়েক হাজার মানুষের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত কয়েক শতাধিক

সলিল বরণ দাশ, নবীগঞ্জ(হবিগঞ্জ)প্রতিনিধিঃ

নবীগঞ্জ শহরে সম্প্রতি দফায় দফায় একাধিক সংঘর্ষের জের ধরে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, বেসরকারী হাসপাতাল ও যানবাহনে ভাঙচুর- লুটপাট এবং ট্রাক, বাস , সিএনজি, ভাংচুর, দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ, এবং মোটরসাইকেলে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ব্যাপক ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছিল বিগত ৪দিন যাবৎ। ভাঙচুর ও লুটপাটে অন্তত কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে ১ জন নিহত ও উভয় পক্ষের কয়েক শতাধিক লোক আহত হয়েছেন । এ ঘটনায় শহরে ১৪৪ ধারা জারি করেছে উপজেলা নির্বাহী অফিসার।

গতকাল সোমবার সকালে নবীগঞ্জ পৌর এলাকার আনমনু ও তিমিরপুর গ্রামের লোকজন পুর্ব ঘোষনা দিয়ে নিজ নিজ এলাকায় পুর্ব প্রস্তুতিমুলক মিটিং করেন। এর পরে বিকাল ৩ ঘটিকার পূর্ব ঘোষনা দিয়ে উভয় গ্রামের শত শত মানুষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সংঘর্ষটি এক পর্যায়ে নবীগঞ্জ শহরে আশপাশের আনমনু, নোয়াপাড়া, রাজাবাদ এক পক্ষে, অপর পক্ষে পূর্ব তিমির পুর, পশ্চিম তিমিরপুর ও চরগাও গ্রামের নারী পুরুষ দুটি পক্ষ হয়ে কয়েক হাজার মানুষ সংঘর্ষে জড়ান। এতে সংঘর্ষ চলাকালে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে উভয় পক্ষে কয়েক শতাধিক নারী পুরুষ আহত হয়েছেন। এতে পুর্ব তিমিরপুর গ্রামের এম্বুলেন্স চালক ফারুক মিয়া (৪২) নামে একজন মারা গেছেন। এ সময় শহরের মধ্যে শতাধিক দোকান পাট ভাংচুর ও লুটপাট হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দেয়া হয়। বিশেষ করে ইউনাইডেট হসপিটাল ভাংচুর , মাছ বাজার, হোটেল হাসেমবাগে ভাংচুর লুটপাট হয়েছে। এছাড়া শহরের মধ‍্য বাজার, হাসপাতাল রোডের প্রতিটি মার্কেট ও দোকানপাট ভাংচুর ও লুটপাট হয়েছে। এক অরাজকতা শহরের মধ্যে চলে প্রায় ৪ ঘন্টা ব্যাপী হয়েছে। পরে যৌথবাহিনী আপ্রান চেষ্টা করে সংঘর্ষ থামায়।

এদিকে শহরজুড়ে এক ধরনের নৈরাজ্যকর অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিমত। গুজব ছড়িয়ে আনমনু ও তিমিরপুর গ্রামের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনাকে উসকে দিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করছে একটি বিশেষ মহল। কারন আনমনু গ্রাম হচ্ছে মৎস্যজীবি আর তিমিরপুর গ্রাম হচ্ছে অমৎস‍্যজীবী।
গত শুক্রবার রাতের সংঘাতের পর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযান শহরের পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত করলেও পরদিন শনিবার সকাল থেকে আবার উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আনমুনু গ্রামের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নবীগঞ্জ শহর ও আনমনু পয়েন্টে জড়ো হতে থাকলে আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা। এর জের ধরে শহরে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। রবিবার সকালে ও রাতে সংঘর্ষ ও চোরাগুপ্তা হামলা হয়। এর জের ধরে সোমবার সকালে উভয় গ্রামের লোকজন পুর্ব প্রস্তুতি সভা করে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।

শহরের সংঘর্ষের সময় সুযোগ নিয়ে হামলা ও লুটপাট চালায় একটি সংঘবদ্ধ চক্র। শামীম আহমদ নামে এক ব্যবসায়ী ও কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাজারে যখন আতঙ্কে নিরবতা নেমে আসে এবং কেউ থাকে না, তখন এই চক্রটি ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে ঢুকে হামলা ও লুটপাট চালায়।
গত ৪ দিনে বাজারের অন্তত ৫০টি দোকানে ভাঙচুর ও লুটের ঘটনা ঘটে। ব্যাটারিচালিত মিশুক ভাঙচুর করে ব্যাটারি চুরি করা হয়েছে। এছাড়া আরো কয়েকটি মিশুক ভাংচুর ও মোটর সাইকেলে আগুন দেয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন, অনেকেই সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেছেন।
সংঘাত নিরসনে হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সুজাত মিয়া, জামায়াত মনোনীত এমপি প্রার্থী মোঃ শাহজাহান আলী, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সরফরাজ আহমদ চৌধুরী, গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা আবুল হোসেন জীবন প্রমুখ সালিশের উদ্যোগ নিয়েছেন কিন্তু শালিস না মেনে দু পক্ষই সংঘর্ষে যায়।। থমথমে পরিবেশ এখনও বিরাজ করছে। অপর দিকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র মৎস্যজীবী ও অমৎজীবীদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে। সন্ধ্যার পর উপজেলার বাংলাবাজারে মৎস্যজীবীদের মাছের বাজার গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, এ ছাড়াও রামপুরের মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ শহরে মারামারিতে আসতে চাইলে মান্দারকান্দির অমৎজীবীরা মারধর করেন, এ ছাড়াও দুর্লভপুর গ্রামে ও সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে । এ ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন গ্রামেও এ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ার আংশকা করা যাচ্ছে।

উল্লেখ্য গত শুক্রবার বার রাতে ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের যুবলীগের সভাপতি (বতর্মান) গনঅধিকার পরিষদের সহ-সভাপতি আশাহিদ আলী আশা ও পুর্ব তিমিরপুর গ্রামের খরছু তালুকদারের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সুত্রপাত হয়।
নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মো. কামরুজ্জামান জানান, “আমরা বিষয়টি সমাধানের আহ্বান জানিয়েছি। সংঘর্ষ ও লুটপাটের বিষয়ে আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি। তবে পুরো বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছে।” শহরে শান্তি শৃংখলা রক্ষায় অতিরিক্ত পুলিশ, সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। বতর্মানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৯:৩৭:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫
০ বার পড়া হয়েছে

৪দিনের উত্তেজনার পর নবীগঞ্জে কয়েক হাজার মানুষের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত কয়েক শতাধিক

আপডেট সময় ০৯:৩৭:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫

নবীগঞ্জ শহরে সম্প্রতি দফায় দফায় একাধিক সংঘর্ষের জের ধরে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, বেসরকারী হাসপাতাল ও যানবাহনে ভাঙচুর- লুটপাট এবং ট্রাক, বাস , সিএনজি, ভাংচুর, দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ, এবং মোটরসাইকেলে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ব্যাপক ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছিল বিগত ৪দিন যাবৎ। ভাঙচুর ও লুটপাটে অন্তত কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে ১ জন নিহত ও উভয় পক্ষের কয়েক শতাধিক লোক আহত হয়েছেন । এ ঘটনায় শহরে ১৪৪ ধারা জারি করেছে উপজেলা নির্বাহী অফিসার।

গতকাল সোমবার সকালে নবীগঞ্জ পৌর এলাকার আনমনু ও তিমিরপুর গ্রামের লোকজন পুর্ব ঘোষনা দিয়ে নিজ নিজ এলাকায় পুর্ব প্রস্তুতিমুলক মিটিং করেন। এর পরে বিকাল ৩ ঘটিকার পূর্ব ঘোষনা দিয়ে উভয় গ্রামের শত শত মানুষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সংঘর্ষটি এক পর্যায়ে নবীগঞ্জ শহরে আশপাশের আনমনু, নোয়াপাড়া, রাজাবাদ এক পক্ষে, অপর পক্ষে পূর্ব তিমির পুর, পশ্চিম তিমিরপুর ও চরগাও গ্রামের নারী পুরুষ দুটি পক্ষ হয়ে কয়েক হাজার মানুষ সংঘর্ষে জড়ান। এতে সংঘর্ষ চলাকালে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে উভয় পক্ষে কয়েক শতাধিক নারী পুরুষ আহত হয়েছেন। এতে পুর্ব তিমিরপুর গ্রামের এম্বুলেন্স চালক ফারুক মিয়া (৪২) নামে একজন মারা গেছেন। এ সময় শহরের মধ্যে শতাধিক দোকান পাট ভাংচুর ও লুটপাট হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দেয়া হয়। বিশেষ করে ইউনাইডেট হসপিটাল ভাংচুর , মাছ বাজার, হোটেল হাসেমবাগে ভাংচুর লুটপাট হয়েছে। এছাড়া শহরের মধ‍্য বাজার, হাসপাতাল রোডের প্রতিটি মার্কেট ও দোকানপাট ভাংচুর ও লুটপাট হয়েছে। এক অরাজকতা শহরের মধ্যে চলে প্রায় ৪ ঘন্টা ব্যাপী হয়েছে। পরে যৌথবাহিনী আপ্রান চেষ্টা করে সংঘর্ষ থামায়।

এদিকে শহরজুড়ে এক ধরনের নৈরাজ্যকর অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিমত। গুজব ছড়িয়ে আনমনু ও তিমিরপুর গ্রামের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনাকে উসকে দিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করছে একটি বিশেষ মহল। কারন আনমনু গ্রাম হচ্ছে মৎস্যজীবি আর তিমিরপুর গ্রাম হচ্ছে অমৎস‍্যজীবী।
গত শুক্রবার রাতের সংঘাতের পর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযান শহরের পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত করলেও পরদিন শনিবার সকাল থেকে আবার উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আনমুনু গ্রামের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নবীগঞ্জ শহর ও আনমনু পয়েন্টে জড়ো হতে থাকলে আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা। এর জের ধরে শহরে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। রবিবার সকালে ও রাতে সংঘর্ষ ও চোরাগুপ্তা হামলা হয়। এর জের ধরে সোমবার সকালে উভয় গ্রামের লোকজন পুর্ব প্রস্তুতি সভা করে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।

শহরের সংঘর্ষের সময় সুযোগ নিয়ে হামলা ও লুটপাট চালায় একটি সংঘবদ্ধ চক্র। শামীম আহমদ নামে এক ব্যবসায়ী ও কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাজারে যখন আতঙ্কে নিরবতা নেমে আসে এবং কেউ থাকে না, তখন এই চক্রটি ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে ঢুকে হামলা ও লুটপাট চালায়।
গত ৪ দিনে বাজারের অন্তত ৫০টি দোকানে ভাঙচুর ও লুটের ঘটনা ঘটে। ব্যাটারিচালিত মিশুক ভাঙচুর করে ব্যাটারি চুরি করা হয়েছে। এছাড়া আরো কয়েকটি মিশুক ভাংচুর ও মোটর সাইকেলে আগুন দেয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন, অনেকেই সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেছেন।
সংঘাত নিরসনে হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সুজাত মিয়া, জামায়াত মনোনীত এমপি প্রার্থী মোঃ শাহজাহান আলী, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সরফরাজ আহমদ চৌধুরী, গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা আবুল হোসেন জীবন প্রমুখ সালিশের উদ্যোগ নিয়েছেন কিন্তু শালিস না মেনে দু পক্ষই সংঘর্ষে যায়।। থমথমে পরিবেশ এখনও বিরাজ করছে। অপর দিকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র মৎস্যজীবী ও অমৎজীবীদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে। সন্ধ্যার পর উপজেলার বাংলাবাজারে মৎস্যজীবীদের মাছের বাজার গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, এ ছাড়াও রামপুরের মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ শহরে মারামারিতে আসতে চাইলে মান্দারকান্দির অমৎজীবীরা মারধর করেন, এ ছাড়াও দুর্লভপুর গ্রামে ও সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে । এ ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন গ্রামেও এ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ার আংশকা করা যাচ্ছে।

উল্লেখ্য গত শুক্রবার বার রাতে ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের যুবলীগের সভাপতি (বতর্মান) গনঅধিকার পরিষদের সহ-সভাপতি আশাহিদ আলী আশা ও পুর্ব তিমিরপুর গ্রামের খরছু তালুকদারের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সুত্রপাত হয়।
নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মো. কামরুজ্জামান জানান, “আমরা বিষয়টি সমাধানের আহ্বান জানিয়েছি। সংঘর্ষ ও লুটপাটের বিষয়ে আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি। তবে পুরো বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছে।” শহরে শান্তি শৃংখলা রক্ষায় অতিরিক্ত পুলিশ, সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। বতর্মানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।