ঢাকা ১২:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo ৫২৩ বছরের ঐতিহ্য শায়েস্তাগঞ্জ দাউদনগর জামে মসজিদ Logo নবীগঞ্জে পাখি শিকারীর কাছ থেকে উদ্ধার করা বন্য বালিহাস পাখি অবমুক্তি,পাখি শিকারীকে অর্থদন্ড Logo আবারও প্রকৃতিপ্রেমীদের হাতছানি দিচ্ছে চুনারুঘাটের শাপলা বিল Logo বাহুবল শিশুদের ঝগড়া থেকে বড়দের সংঘর্ষ, আহত ৫০ Logo হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে র‌্যাবের অভিযান, ৯ জনকে কারাদন্ড Logo হবিগঞ্জ পৌরসভার কোটি টাকার অব্যবহৃত যানে গজিয়েছে গাছ Logo দুটি স্পেশাল ট্রেন চালুসহ ৯ দফা দাবীতে শায়েস্তাগঞ্জ রেলস্টেশনে মানববন্ধন পালন Logo হবিগঞ্জ থেকে প্রতিদিন মিলবে আরও ১৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস Logo নবীগঞ্জে পিতার দায়ের কোপে মেয়ে খুন,ঘাতক পিতা আটক। Logo হবিগঞ্জে বাস উল্টে যুবকের মৃত্যু, আহত ৫০

৫২৩ বছরের ঐতিহ্য শায়েস্তাগঞ্জ দাউদনগর জামে মসজিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

হবিগঞ্জ জেলার প্রাণকেন্দ্রে, শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার অন্তর্গত দাউদনগর গ্রাম—একটি নাম, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে পাঁচ শতাধিক বছরের ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক ঐতিহ্য। রেলওয়ে জংশনের পূর্ব-উত্তর কোণে অবস্থিত এই গ্রামের মাটিতে মিশে আছে ইসলাম প্রচারের এক উজ্জ্বল অধ্যায়।

ইতিহাস বলছে, হযরত শাহজালাল (রঃ) যখন ইসলাম প্রচারের মহান দায়িত্ব নিয়ে সিলেট আগমন করেন, তাঁর সঙ্গে এসেছিলেন ৩৬০ জন আওলিয়া। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দিন (রঃ)—যিনি সাহস, আধ্যাত্মিকতা ও নেতৃত্বগুণে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। তাঁর নবম বংশধর ছিলেন বন্দেগী শাহ সৈয়দ দাউদ (রঃ)। এই মহান ব্যক্তির পদস্পর্শে ধন্য হয় বর্তমান দাউদনগর গ্রাম, যার নামকরণও হয় তাঁর নামানুসারে।
সৈয়দ শাহ দাউদের বংশধররা আজও বসবাস করছেন ঐতিহাসিক দাউদনগর হাবেলীতে, যা এখনো অতীত ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে আছে।

দাউদনগর হাবেলীর সম্মুখে অবস্থিত পুকুরের দক্ষিণ পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক দাউদনগর জামে মসজিদ—যার বয়স প্রায় ৫২৩ বছর। ফার্সী ভাষায় খোদাই করা দুটি শিলালিপি থেকে জানা যায়, মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল ৯১৯ হিজরির রবিউসসানী মাসের ১১ তারিখে (বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী ১৫ শতকের শেষ দিকে)।
দুঃখজনকভাবে, অষ্টাদশ শতাব্দীতে এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে প্রাচীন এই মসজিদটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে দক্ষিণাংশে থাকা একটি বিশাল গম্বুজ বহু বছর ধরে টিকে ছিল। স্থানীয় জনশ্রুতি অনুযায়ী, ভূমিকম্প চলাকালীন সেই গম্বুজের নিচে এক আল্লাহভক্ত ওলী ধ্যানমগ্ন অবস্থায় ছিলেন, তাঁর অলৌকিক প্রভাবে গম্বুজটি অক্ষত থাকে।

বর্তমানে সৈয়দ শাহ দাউদের ধর্মপ্রাণ উত্তরাধিকারীরা ঐতিহাসিক এই মসজিদটি আধুনিক রূপে পুনর্নির্মাণ করেছেন। নিরাপত্তার কারণে পুরোনো গম্বুজটি সরিয়ে ফেলতে হলেও তারা সংরক্ষণ করেছেন মসজিদের ঐতিহ্য ও স্থাপত্যশৈলীর মাহাত্ম্য। আজও এই মসজিদে প্রতিদিনের নামাজ, মিলাদ, ও ইসলামিক শিক্ষা কার্যক্রম চলে—যা প্রমাণ করে শতাব্দী পেরিয়েও ঐতিহ্যের শেকড় এখনো অটুট।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ১১:৫৮:২৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
১ বার পড়া হয়েছে

৫২৩ বছরের ঐতিহ্য শায়েস্তাগঞ্জ দাউদনগর জামে মসজিদ

আপডেট সময় ১১:৫৮:২৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫

হবিগঞ্জ জেলার প্রাণকেন্দ্রে, শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার অন্তর্গত দাউদনগর গ্রাম—একটি নাম, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে পাঁচ শতাধিক বছরের ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক ঐতিহ্য। রেলওয়ে জংশনের পূর্ব-উত্তর কোণে অবস্থিত এই গ্রামের মাটিতে মিশে আছে ইসলাম প্রচারের এক উজ্জ্বল অধ্যায়।

ইতিহাস বলছে, হযরত শাহজালাল (রঃ) যখন ইসলাম প্রচারের মহান দায়িত্ব নিয়ে সিলেট আগমন করেন, তাঁর সঙ্গে এসেছিলেন ৩৬০ জন আওলিয়া। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দিন (রঃ)—যিনি সাহস, আধ্যাত্মিকতা ও নেতৃত্বগুণে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। তাঁর নবম বংশধর ছিলেন বন্দেগী শাহ সৈয়দ দাউদ (রঃ)। এই মহান ব্যক্তির পদস্পর্শে ধন্য হয় বর্তমান দাউদনগর গ্রাম, যার নামকরণও হয় তাঁর নামানুসারে।
সৈয়দ শাহ দাউদের বংশধররা আজও বসবাস করছেন ঐতিহাসিক দাউদনগর হাবেলীতে, যা এখনো অতীত ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে আছে।

দাউদনগর হাবেলীর সম্মুখে অবস্থিত পুকুরের দক্ষিণ পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক দাউদনগর জামে মসজিদ—যার বয়স প্রায় ৫২৩ বছর। ফার্সী ভাষায় খোদাই করা দুটি শিলালিপি থেকে জানা যায়, মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল ৯১৯ হিজরির রবিউসসানী মাসের ১১ তারিখে (বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী ১৫ শতকের শেষ দিকে)।
দুঃখজনকভাবে, অষ্টাদশ শতাব্দীতে এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে প্রাচীন এই মসজিদটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে দক্ষিণাংশে থাকা একটি বিশাল গম্বুজ বহু বছর ধরে টিকে ছিল। স্থানীয় জনশ্রুতি অনুযায়ী, ভূমিকম্প চলাকালীন সেই গম্বুজের নিচে এক আল্লাহভক্ত ওলী ধ্যানমগ্ন অবস্থায় ছিলেন, তাঁর অলৌকিক প্রভাবে গম্বুজটি অক্ষত থাকে।

বর্তমানে সৈয়দ শাহ দাউদের ধর্মপ্রাণ উত্তরাধিকারীরা ঐতিহাসিক এই মসজিদটি আধুনিক রূপে পুনর্নির্মাণ করেছেন। নিরাপত্তার কারণে পুরোনো গম্বুজটি সরিয়ে ফেলতে হলেও তারা সংরক্ষণ করেছেন মসজিদের ঐতিহ্য ও স্থাপত্যশৈলীর মাহাত্ম্য। আজও এই মসজিদে প্রতিদিনের নামাজ, মিলাদ, ও ইসলামিক শিক্ষা কার্যক্রম চলে—যা প্রমাণ করে শতাব্দী পেরিয়েও ঐতিহ্যের শেকড় এখনো অটুট।