ঢাকা ১০:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ব্রাজিলের পিছু ছাড়ছে না ‘সেভেন’

স্পোর্টস ডেস্ক

আমরা জানি, সূর্যের আলো সাতটি রঙের সমাহার। এই রংগুলোর প্রথম অক্ষর পরপর সাজিয়ে বলা হয় ‘বেনীআসহকলা’ অর্থাৎ বেগুনি, নীল, আসমানি, সবুজ, হলুদ, কমলা ও লাল। ইংরেজিতে বলে ‘VIBGYOR’। এখানে ৭ সংখ্যাটি তাৎপর্যপূর্ণ। সেই প্রাচীন কাল থেকেই সাত দিনে সপ্তাহের হিসাব চালু হয়েছে।

আমরা আরও জানি, বিশ্বের সপ্ত আশ্চর্যের কথা। তা ছাড়া, সাত সমুদ্র, সাত মহাদেশ এবং সর্বোপরি ‘সাত ভাই চম্পা’—এগুলো সবই ৭-এর মাহাত্ম্য প্রকাশ করে। তাইতো সেভেনকে বলা হয় ‘লাকি সেভেন’। ঠিক কী কারণে সাতকে সৌভাগ্যের প্রতীক বলা হয়, তা বলা কঠিন। তবে গ্রিক দার্শনিক ও গণিতবিদ পিথাগোরাসের অনুসারীদের মতে, সাত একটি সম্পূর্ণ বা নিখুঁত সংখ্যা (পারফেক্ট নাম্বার)। তাই সাতকে ‘লাকি’ নম্বর বলা হয়ে থাকে।

তবে এই সাত কি সবসময় লাকি হয়? হয়তো হয়, আবার কারো কারো কাছে ‘লাকি’ নম্বরটিই ‘আনলাকি’। আর এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হতে পারে ব্রাজিল ফুটবল দল।

ব্রাজিলের কাছে সাত কেন আনলাকি তা বোধহয় বোঝার বাকি নেই কারও। বিষয়টির ইতিহাস খুঁজতে হলে ফিরে যেতে হবে দশবছর আগের মারাকানায়। ২০১৪ বিশ্বকাপ আয়োজন করেছিল ব্রাজিল। নেইমার, অস্কার, সিলভা, মার্সেলোদের মতো তারকাসমৃদ্ধ দলটিকে ওই বিশ্বকাপ আসরের অন্যতম শিরোপার দাবিদার ভাবা হচ্ছিল। তবে ৯ জুলাই, মারাকানায় সেমিফাইনালে ব্রাজিলের সাথে যা ঘটে… তা হয়তো কেউ কল্পনাও করেননি।

দারুণ ছন্দে থাকা ব্রাজিলকে তাদেরই মাঠে ৭ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে পা রাখেন ক্লোসা, মুলার, টনি ক্রুসরা। মাঠে ব্রাজিলের খেলোয়াড় আর গ্যালারি ভর্তি দর্শকদের কান্না হৃদয় ভেঙেছিল ফুটবলপ্রেমীদের। ওই ম্যাচের পর থেকে গত ১০ বছর ধরে সেলেসাওদের ‘সেভেন আপ’ নামে ট্রলের শিকার হতে হচ্ছে। এখানে ‘সেভেন’ বা সাত ব্রাজিলের জন্য আনলাকি হলেও পেপসিকোর জন্য সংখ্যাটি ‘লাকি’ই বলা যায়। কেননা, সেভেন আপ, সেভেন আপ ট্রলের মাধ্যমে ফ্রিতে তাদের কোমল পানীয়র ঠিকই প্রচারণা হয়ে যাচ্ছে।

মারাকানার সেই সাতের গেরো এখন খোলেনি ব্রাজিলের। এই যেমন, সাত মাস অর্থাৎ জুলাই মাস লেখার সময় কট্টর ব্রাজিল সমালোচকরা সাত না লিখে, সেখানে ব্রাজিলের পতাকার ইমুজি ব্যবহার করেও মজা নিতে ছাড়েন না। আবার সেই একই তারিখকেও ব্রাজিলের পতাকা দিয়ে মজা নেন, ব্রাজিলবিদ্বেষীরা।

শুধু মারাকানায়, সাত গোলের সেই ‘সেভেন’ নয়, ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপেও রয়েছে ব্রাজিলের ‘সেভেন’ ট্রাজেডি। সেবার বেলজিয়ামের কাছে ২-১ গোলে হেরে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছিল ব্রাজিল। আরেকটি বিষয় হচ্ছে বেলজিয়ামের কাছে ব্রাজিল যেদিন হেরেছিল ওইদিনের তারিখটি ছিল জুলাইয়ের সাত। অর্থাৎ এখানেও ‘সেভেন’ তথা সাতের ধাঁধাঁয় পড়ে ব্রাজিল।

সবশেষ রোববার (৭ জুলাই) কোপা আমেরিকার-২০২৪ আসরের কোয়ার্টার ফাইনালে উরুগুয়ের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছে ব্রাজিল। নির্ধারিত সময়ে গোলশূন্য ড্র ছিল দু’দলের লড়াই। ফলাফল নির্ধারিত হয় টাইব্রেকারে। যেখানে ৪-২ ব্যবধানে জিতে সেমি নিশ্চিত করেছে উরুগুয়ে। ব্রাজিল এবারও ধরাশায়ী হয়েছে জুলাই মাসের সাত তারিখে। মানে আবারও সেভেনে আটকা পড়লো দরিভাল জুনিয়রের শিষ্যরা। তাই তো বলা যায়, সেভেন বা সাত সবার জন্য ‘লাকি’ হলেও এটি ‘আনলাকি’ হয়ে পিছু নিয়েছে ব্রাজিল দলের।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৬:০৩:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ জুলাই ২০২৪
৩৪ বার পড়া হয়েছে

ব্রাজিলের পিছু ছাড়ছে না ‘সেভেন’

আপডেট সময় ০৬:০৩:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ জুলাই ২০২৪

আমরা জানি, সূর্যের আলো সাতটি রঙের সমাহার। এই রংগুলোর প্রথম অক্ষর পরপর সাজিয়ে বলা হয় ‘বেনীআসহকলা’ অর্থাৎ বেগুনি, নীল, আসমানি, সবুজ, হলুদ, কমলা ও লাল। ইংরেজিতে বলে ‘VIBGYOR’। এখানে ৭ সংখ্যাটি তাৎপর্যপূর্ণ। সেই প্রাচীন কাল থেকেই সাত দিনে সপ্তাহের হিসাব চালু হয়েছে।

আমরা আরও জানি, বিশ্বের সপ্ত আশ্চর্যের কথা। তা ছাড়া, সাত সমুদ্র, সাত মহাদেশ এবং সর্বোপরি ‘সাত ভাই চম্পা’—এগুলো সবই ৭-এর মাহাত্ম্য প্রকাশ করে। তাইতো সেভেনকে বলা হয় ‘লাকি সেভেন’। ঠিক কী কারণে সাতকে সৌভাগ্যের প্রতীক বলা হয়, তা বলা কঠিন। তবে গ্রিক দার্শনিক ও গণিতবিদ পিথাগোরাসের অনুসারীদের মতে, সাত একটি সম্পূর্ণ বা নিখুঁত সংখ্যা (পারফেক্ট নাম্বার)। তাই সাতকে ‘লাকি’ নম্বর বলা হয়ে থাকে।

তবে এই সাত কি সবসময় লাকি হয়? হয়তো হয়, আবার কারো কারো কাছে ‘লাকি’ নম্বরটিই ‘আনলাকি’। আর এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হতে পারে ব্রাজিল ফুটবল দল।

ব্রাজিলের কাছে সাত কেন আনলাকি তা বোধহয় বোঝার বাকি নেই কারও। বিষয়টির ইতিহাস খুঁজতে হলে ফিরে যেতে হবে দশবছর আগের মারাকানায়। ২০১৪ বিশ্বকাপ আয়োজন করেছিল ব্রাজিল। নেইমার, অস্কার, সিলভা, মার্সেলোদের মতো তারকাসমৃদ্ধ দলটিকে ওই বিশ্বকাপ আসরের অন্যতম শিরোপার দাবিদার ভাবা হচ্ছিল। তবে ৯ জুলাই, মারাকানায় সেমিফাইনালে ব্রাজিলের সাথে যা ঘটে… তা হয়তো কেউ কল্পনাও করেননি।

দারুণ ছন্দে থাকা ব্রাজিলকে তাদেরই মাঠে ৭ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে পা রাখেন ক্লোসা, মুলার, টনি ক্রুসরা। মাঠে ব্রাজিলের খেলোয়াড় আর গ্যালারি ভর্তি দর্শকদের কান্না হৃদয় ভেঙেছিল ফুটবলপ্রেমীদের। ওই ম্যাচের পর থেকে গত ১০ বছর ধরে সেলেসাওদের ‘সেভেন আপ’ নামে ট্রলের শিকার হতে হচ্ছে। এখানে ‘সেভেন’ বা সাত ব্রাজিলের জন্য আনলাকি হলেও পেপসিকোর জন্য সংখ্যাটি ‘লাকি’ই বলা যায়। কেননা, সেভেন আপ, সেভেন আপ ট্রলের মাধ্যমে ফ্রিতে তাদের কোমল পানীয়র ঠিকই প্রচারণা হয়ে যাচ্ছে।

মারাকানার সেই সাতের গেরো এখন খোলেনি ব্রাজিলের। এই যেমন, সাত মাস অর্থাৎ জুলাই মাস লেখার সময় কট্টর ব্রাজিল সমালোচকরা সাত না লিখে, সেখানে ব্রাজিলের পতাকার ইমুজি ব্যবহার করেও মজা নিতে ছাড়েন না। আবার সেই একই তারিখকেও ব্রাজিলের পতাকা দিয়ে মজা নেন, ব্রাজিলবিদ্বেষীরা।

শুধু মারাকানায়, সাত গোলের সেই ‘সেভেন’ নয়, ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপেও রয়েছে ব্রাজিলের ‘সেভেন’ ট্রাজেডি। সেবার বেলজিয়ামের কাছে ২-১ গোলে হেরে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছিল ব্রাজিল। আরেকটি বিষয় হচ্ছে বেলজিয়ামের কাছে ব্রাজিল যেদিন হেরেছিল ওইদিনের তারিখটি ছিল জুলাইয়ের সাত। অর্থাৎ এখানেও ‘সেভেন’ তথা সাতের ধাঁধাঁয় পড়ে ব্রাজিল।

সবশেষ রোববার (৭ জুলাই) কোপা আমেরিকার-২০২৪ আসরের কোয়ার্টার ফাইনালে উরুগুয়ের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছে ব্রাজিল। নির্ধারিত সময়ে গোলশূন্য ড্র ছিল দু’দলের লড়াই। ফলাফল নির্ধারিত হয় টাইব্রেকারে। যেখানে ৪-২ ব্যবধানে জিতে সেমি নিশ্চিত করেছে উরুগুয়ে। ব্রাজিল এবারও ধরাশায়ী হয়েছে জুলাই মাসের সাত তারিখে। মানে আবারও সেভেনে আটকা পড়লো দরিভাল জুনিয়রের শিষ্যরা। তাই তো বলা যায়, সেভেন বা সাত সবার জন্য ‘লাকি’ হলেও এটি ‘আনলাকি’ হয়ে পিছু নিয়েছে ব্রাজিল দলের।