ঢাকা ১১:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লাখাইয়ে বস্তায় আদা চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের

লাখাই (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি

লাখাইয়ে বস্তায় মসলাজাতীয় ফসল আদা আবাদ করতে কৃষকদের আগ্রহ দিন দিন বেড়ে চলছে। একসময় লাখাইয়ে বাড়ির আশেপাশের পতিত জমিতে স্বল্প পরিসরে পারিবারিক চাহিদা মেটাতে আবাদ হলেও ফলন তেমন বেশি হত না। তাই সময়ের ব্যবধানে হ্রাস পেতে থাকে উৎপাদন। তবে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মসলা জাতীয় ফসল ও ভেষজ গুণ সম্পন্ন আদা চাষের আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় আদার প্রদর্শনী দিয়ে সহযোগিতা করে আসছেন।

এরই অংশ হিসাবে বিগত ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে ফ্লাড রিকনস্ট্রাকশন ইমার্জেন্সী এসিস্ট্যান্ট প্রজেক্ট (ফ্রিপ) আওতায় উপজেলার ৬ টি ইউনিয়ন এর ৬ জন কৃষকের মাঝে বস্তায় আদা চাষের প্রদর্শনী দিয়ে সহযোগিতা করে। এই ৬ টি প্রদর্শনীর আদার ফলন আশানুরূপ হওয়ায় এ প্রদ্ধতিতে আদা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। যে প্রদর্শনী গুলো সড়কের পাশে এবং সহজে নজরে আসে তা দেখতে কৃষকরা আসছে এবং তা দেখে তাদের আগ্রহের কথা উপজেলা কৃষি কর্মকতাকে জানাচ্ছেন বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়।

এমনই একজন সফল বস্তায় আদা চাষি উপজেলার করাব ইউনিয়নের পূর্ব সিংহগ্রাম এর মো. বাহার উদ্দিন। তিনি দীর্ঘদিন যাবত খোরপোষের জন্য মৌসুমী শাকসবজী ও ভেষজ গুণ সম্পন্ন সবজির আবাদ করে আসছেন। তিনি মৌসুম ভেদে লালশাক, মূলা, গাজর, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধা কপি, ঢেঁড়স, করল্লা, ঝিঙে, তরমুজ, ডাটা, কলমিশাক, থানকুনি পাতা, দেশী বরবটি, সিমকরল্লা, তেলাকুচা, কুলকুচা, মেষ্টাপাতা, তুলসীগাছ, বিলাতী ধনে পাতা, পাটশাক, এলেভেরা এবং বানিজ্যিকভাবে মরিচ, মিষ্টি কুমড়া, কাঁচকলা চাষ করে আসছেন।
চলতি মৌসুমে তিনি তার বসতবাড়ির ছায়াযুক্ত স্থানে ১’শ বস্তায় আদার করেছেন এবং ফ্রিপ প্রকল্পের আওতায় মধ্য সিংহগ্রাম সড়কের বুল্লাবাজার এলাকায় ৫০ টি বস্তায় আদা প্রদর্শনীর আদা চাষ করেছেন।
সড়কের পাশের এ প্রদর্শনীর আদার আশানুরূপ ফলন হওয়ায় এবং তা দেখে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। তারা এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিকট পরামর্শ ও সহযোগিতা চাচ্ছেন।

এ বিষয়ে বস্তায় আদা চাষি মো. বাহার উদ্দিন বলেন, এ প্রযুক্তির বিষয়ে জানার পূর্বে আমি আমার বাড়ির আশেপাশের মাটিতে আদা চাষ করতাম।তবে বিভিন্ন রোগ বালাইয়ের আক্রমণ ও অতিবৃষ্টি হলে ফলন আশানুরূপ হতো না।

বর্তমানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ এর মাধ্যমে ও তাদের পরামর্শ ও প্রদর্শনী দিয়ে সহযোগিতা করায় এ আবাদে আদার কাংক্ষিত ফলনের আশা করছি। বস্তায় আদা চাষে মাটিবাহিত রোগবালাই এর আক্রমণ তেমনটা নেই। যেহেতু লাখাই হাওর বেষ্টিত ও বন্যা প্রব্ণ অঞ্চলের অংশ সেহেতু বস্তায় আদা আবাদ করলে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বস্তায় আদা স্থানান্তর করা যেতে পারে। মাটিতে আবাদ করলে সে সুযোগ নেই। এছাড়া বস্তায় আদা চাষের জন্য আলাদা কোন নির্দিষ্ট জমির প্রয়োজন হয় না। বাড়ির আশেপাশে ছায়াযুক্ত স্থানে, বাঁশবাগানের ফাঁকা জায়গায়,ঘরের পাশের খালি জায়গায় সহজেই বস্তা স্থাপন করা যায়। এতে যে স্থানগুলো কখনোই আবাদের আওতায় আসতো না তা আবাদের উপযোগী করা যায়।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাহমুদুল হাসান মিজান বলেন, লাখাইয়ে বস্তায় আদা চাষের জন্য সম্ভাবনাময় অঞ্চল। আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর মাধ্যমে যে কোন প্রশিক্ষণে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি বস্তায় আদা চাষের বিষয়ে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও উদ্বুদ্ধ করে আসছি। এছাড়া চলতি বছর ৬ টি প্রদর্শনীর মাধ্যমে কৃষকদের সহযোগিতা করে আসছি। বস্তায় আদার ফলন আশানুরূপ হওয়ায় অনেক কৃষকের মাঝে বস্তায় আদা চাষের জন্য আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে এবং তারা আমাদের সাথে যোগাযোগ করছেন।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৭:০৩:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ নভেম্বর ২০২৪
৯ বার পড়া হয়েছে

লাখাইয়ে বস্তায় আদা চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের

আপডেট সময় ০৭:০৩:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ নভেম্বর ২০২৪

লাখাইয়ে বস্তায় মসলাজাতীয় ফসল আদা আবাদ করতে কৃষকদের আগ্রহ দিন দিন বেড়ে চলছে। একসময় লাখাইয়ে বাড়ির আশেপাশের পতিত জমিতে স্বল্প পরিসরে পারিবারিক চাহিদা মেটাতে আবাদ হলেও ফলন তেমন বেশি হত না। তাই সময়ের ব্যবধানে হ্রাস পেতে থাকে উৎপাদন। তবে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মসলা জাতীয় ফসল ও ভেষজ গুণ সম্পন্ন আদা চাষের আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় আদার প্রদর্শনী দিয়ে সহযোগিতা করে আসছেন।

এরই অংশ হিসাবে বিগত ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে ফ্লাড রিকনস্ট্রাকশন ইমার্জেন্সী এসিস্ট্যান্ট প্রজেক্ট (ফ্রিপ) আওতায় উপজেলার ৬ টি ইউনিয়ন এর ৬ জন কৃষকের মাঝে বস্তায় আদা চাষের প্রদর্শনী দিয়ে সহযোগিতা করে। এই ৬ টি প্রদর্শনীর আদার ফলন আশানুরূপ হওয়ায় এ প্রদ্ধতিতে আদা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। যে প্রদর্শনী গুলো সড়কের পাশে এবং সহজে নজরে আসে তা দেখতে কৃষকরা আসছে এবং তা দেখে তাদের আগ্রহের কথা উপজেলা কৃষি কর্মকতাকে জানাচ্ছেন বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়।

এমনই একজন সফল বস্তায় আদা চাষি উপজেলার করাব ইউনিয়নের পূর্ব সিংহগ্রাম এর মো. বাহার উদ্দিন। তিনি দীর্ঘদিন যাবত খোরপোষের জন্য মৌসুমী শাকসবজী ও ভেষজ গুণ সম্পন্ন সবজির আবাদ করে আসছেন। তিনি মৌসুম ভেদে লালশাক, মূলা, গাজর, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধা কপি, ঢেঁড়স, করল্লা, ঝিঙে, তরমুজ, ডাটা, কলমিশাক, থানকুনি পাতা, দেশী বরবটি, সিমকরল্লা, তেলাকুচা, কুলকুচা, মেষ্টাপাতা, তুলসীগাছ, বিলাতী ধনে পাতা, পাটশাক, এলেভেরা এবং বানিজ্যিকভাবে মরিচ, মিষ্টি কুমড়া, কাঁচকলা চাষ করে আসছেন।
চলতি মৌসুমে তিনি তার বসতবাড়ির ছায়াযুক্ত স্থানে ১’শ বস্তায় আদার করেছেন এবং ফ্রিপ প্রকল্পের আওতায় মধ্য সিংহগ্রাম সড়কের বুল্লাবাজার এলাকায় ৫০ টি বস্তায় আদা প্রদর্শনীর আদা চাষ করেছেন।
সড়কের পাশের এ প্রদর্শনীর আদার আশানুরূপ ফলন হওয়ায় এবং তা দেখে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। তারা এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিকট পরামর্শ ও সহযোগিতা চাচ্ছেন।

এ বিষয়ে বস্তায় আদা চাষি মো. বাহার উদ্দিন বলেন, এ প্রযুক্তির বিষয়ে জানার পূর্বে আমি আমার বাড়ির আশেপাশের মাটিতে আদা চাষ করতাম।তবে বিভিন্ন রোগ বালাইয়ের আক্রমণ ও অতিবৃষ্টি হলে ফলন আশানুরূপ হতো না।

বর্তমানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ এর মাধ্যমে ও তাদের পরামর্শ ও প্রদর্শনী দিয়ে সহযোগিতা করায় এ আবাদে আদার কাংক্ষিত ফলনের আশা করছি। বস্তায় আদা চাষে মাটিবাহিত রোগবালাই এর আক্রমণ তেমনটা নেই। যেহেতু লাখাই হাওর বেষ্টিত ও বন্যা প্রব্ণ অঞ্চলের অংশ সেহেতু বস্তায় আদা আবাদ করলে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বস্তায় আদা স্থানান্তর করা যেতে পারে। মাটিতে আবাদ করলে সে সুযোগ নেই। এছাড়া বস্তায় আদা চাষের জন্য আলাদা কোন নির্দিষ্ট জমির প্রয়োজন হয় না। বাড়ির আশেপাশে ছায়াযুক্ত স্থানে, বাঁশবাগানের ফাঁকা জায়গায়,ঘরের পাশের খালি জায়গায় সহজেই বস্তা স্থাপন করা যায়। এতে যে স্থানগুলো কখনোই আবাদের আওতায় আসতো না তা আবাদের উপযোগী করা যায়।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাহমুদুল হাসান মিজান বলেন, লাখাইয়ে বস্তায় আদা চাষের জন্য সম্ভাবনাময় অঞ্চল। আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর মাধ্যমে যে কোন প্রশিক্ষণে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি বস্তায় আদা চাষের বিষয়ে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও উদ্বুদ্ধ করে আসছি। এছাড়া চলতি বছর ৬ টি প্রদর্শনীর মাধ্যমে কৃষকদের সহযোগিতা করে আসছি। বস্তায় আদার ফলন আশানুরূপ হওয়ায় অনেক কৃষকের মাঝে বস্তায় আদা চাষের জন্য আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে এবং তারা আমাদের সাথে যোগাযোগ করছেন।