ঢাকা ১১:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাওরপাড়ের শুঁটকিতে অপার সম্ভাবনা

শায়েস্তাগঞ্জের বাণী ডেস্ক ,

সপ্তাহে একবার। মাসে চার বার। আশ্বিন থেকে ফাল্গুনের শেষ পর্যন্ত ছয়মাসে অন্তত ২৫ থেকে ২৬ বার মাচা ভরে তৈরি করা হয় দেশি মাছের শুঁটকি। দুই মাচায় প্রতিবারে অন্তত ১শ’ ৫০ মণ শুঁটকি তৈরি করা যায়। প্রতি মণ শুঁটকির দাম কমপক্ষে ৪০ হাজার টাকা। এ হিসাব মতে দুই মাচায় ১ বারেই উৎপাদন করা হয় প্রায় ৬০ লক্ষ টাকার শুঁটকি। প্রতি মৌসুমে প্রায় ১৬ কোটি টাকার শুঁটকি তৈরি হয় দুই মাচা থেকে। বড় মাচায় প্রতি সপ্তাহে ১শ মণ ও ছোট মাচায় ৫০ মণ দেশি মাছের শুঁটকি উৎপাদন হয়। এসব শুঁটকি তৈরিতে ৫০ জনেরও বেশি নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। বছরের অর্ধেক সময় এখানে শ্রমশক্তি দিয়ে উপার্জন করে পরিবার চালান অর্ধশতাধিক নারী পুরুষ। যাদের বেশির ভাগই নারী শ্রমিক।

এমন সম্ভাবনাময় ব্যবসার কথা জানিয়েছেন শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের দেখার হাওরপাড়ের গ্রাম কাকিয়ার পাড় (নোয়াগাঁও) গ্রামের শুঁটকি মাচার স্বত্বাধিকারী সুরুজ আলী ও নূরুল ইসলাম।

একাধিক শুঁটকি ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা যায়, পুঁটি, টেংরা, চান্দা, চাপিলা, কাকিলা, চেলাপাতা ও চিংড়ি মাছসহ আরও বিভিন্ন প্রজাতির মাছের শুঁটকি তৈরি করে থাকেন তারা। সুনামগঞ্জ জেলার সর্ববৃহৎ দেখার হাওর, পাগলা বাজার, লামাকাজি বাজার, সুনামগঞ্জ শহর, দিরাই, আমবাড়ি ও দোয়ারা বাজারের দোহালিয়াসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে শুঁটকি তৈরির জন্য কাঁচা মাছ আনা হয় কাকিয়ারপাড় গ্রামে। প্রথমে এসব মাছ কেটে ভিতরের নাড়িভুঁড়ি বের করা হয়। তারপর সামান্য লবণ ছিটিয়ে ভালো করে ধুয়ে নেওয়া হয়। শুঁটকি তৈরির এসব গুরুত্বপূর্ণ কাজের বেশির অংশই করে থাকেন স্থানীয় নারীরা। নারী ও পুরুষ শ্রমিকদের সম্মিলিত তত্ত্বাবধানে তিন দিন পর্যন্ত উজ্জ্বল রোদে শুকিয়ে নিয়ে বস্তাবন্দি করে প্রস্তুতকৃত শুঁটকি পাঠিয়ে দেওয়া হয় দেশের অন্যতম বৃহৎ শুঁটকির বাজার কিশোরগঞ্জের বড় বাজারে।

তারা জানান, মাছ বাচাই, কাটা ও শুকানোর কাজে দুই মাচায় পুরুষদের পাশাপাশি অন্তত ৪০ জন নারী কাজ করেন। প্রতি মণ শুঁটকি কাটা ও বাছাইয়ের জন্য প্রতি নারী শ্রমিক ১শ’ করে টাকা পান। একেকজন দিনে ৩ থেকে ৪ মন শুঁটকি কাটতে ও বাচাই করতে পারেন। এতে তাদের দৈনিক ৩/৪শ’ টাকা উপার্জন হয়। এ ছাড়াও তারা মাছের তেল সংগ্রহ করে অতিরিক্ত টাকা উপার্জন করতে পারেন। নিজ গ্রামে এমন কর্মসংস্থান তৈরি হওয়ায় পরিবার নিয়ে সচ্ছলভাবেই চলছে তাদের পরিবার।

এতসব সম্ভাবনার পরও নানান সমস্যার মধ্যে রয়েছেন দেখার হাওর পাড়ে অবস্থিত কাকিয়ারপাড় গ্রামের শুঁটকি ব্যবসায়ীরা। বছরে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করে পরোক্ষভাবে সরকারকে রাজস্ব দিলেও তাদের প্রতি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের লোকদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সরকারের অর্থনৈতিক সহযোগিতা তো দূরের কথা, সামান্য পরামর্শও কোনোদিন পাননি শুঁটকি ব্যবসায়ীরা। সরকারের সুষ্ঠু পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ সম্ভাবনাময় ব্যবসাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া বা কর্মসংস্থানের দৃষ্টান্ত স্থাপনের সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।

কাকিয়ার পাড় (নোয়াগাঁও) গ্রামের শুঁটকি মাচার স্বত্বাধিকারী সুরুজ আলী বলেন, নিজে নিজে যা জানি তা দিয়েই ব্যবসা করছি। কোনো প্রশিক্ষণ নেই৷ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা নেই। দু’একবার ব্যাংকে লোন আবেদন করে ব্যর্থ হয়েছি। যদি সরকার আমাদেরকে এ ব্যবসায় সাহায্য করতেন তাহলে আমরা দেশের চাহিদা মিটিয়ে এ শুঁটকি বিদেশেও পাঠাতে পারতাম। আমাদের মাচায় মানুষ কাজ করে। তাদের বেতন দিতে পারি। তারা টাকা পেলে আমার আনন্দ লাগে। আমি গর্ববোধ করি।

শান্তিগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে শুঁটকি চাষিদেরকে দুই গ্রুপে ভাগ করেছি। ক্রমান্বয়ে গ্রুপ বাড়ানো হবে। তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। বাঁশ, জাল, মাচা করে দেব। এলাকায় স্থানীয় শুঁটকি ব্যবসায়ীর চেয়ে কিশোরগঞ্জসহ অন্যান্য জায়গার ব্যবসায়ী বেশি। সকল শুঁটকি চাষিদের সাথে যোগাযোগ করে তাদেরকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৩:২৬:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪
৪৫ বার পড়া হয়েছে

হাওরপাড়ের শুঁটকিতে অপার সম্ভাবনা

আপডেট সময় ০৩:২৬:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪

সপ্তাহে একবার। মাসে চার বার। আশ্বিন থেকে ফাল্গুনের শেষ পর্যন্ত ছয়মাসে অন্তত ২৫ থেকে ২৬ বার মাচা ভরে তৈরি করা হয় দেশি মাছের শুঁটকি। দুই মাচায় প্রতিবারে অন্তত ১শ’ ৫০ মণ শুঁটকি তৈরি করা যায়। প্রতি মণ শুঁটকির দাম কমপক্ষে ৪০ হাজার টাকা। এ হিসাব মতে দুই মাচায় ১ বারেই উৎপাদন করা হয় প্রায় ৬০ লক্ষ টাকার শুঁটকি। প্রতি মৌসুমে প্রায় ১৬ কোটি টাকার শুঁটকি তৈরি হয় দুই মাচা থেকে। বড় মাচায় প্রতি সপ্তাহে ১শ মণ ও ছোট মাচায় ৫০ মণ দেশি মাছের শুঁটকি উৎপাদন হয়। এসব শুঁটকি তৈরিতে ৫০ জনেরও বেশি নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। বছরের অর্ধেক সময় এখানে শ্রমশক্তি দিয়ে উপার্জন করে পরিবার চালান অর্ধশতাধিক নারী পুরুষ। যাদের বেশির ভাগই নারী শ্রমিক।

এমন সম্ভাবনাময় ব্যবসার কথা জানিয়েছেন শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের দেখার হাওরপাড়ের গ্রাম কাকিয়ার পাড় (নোয়াগাঁও) গ্রামের শুঁটকি মাচার স্বত্বাধিকারী সুরুজ আলী ও নূরুল ইসলাম।

একাধিক শুঁটকি ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা যায়, পুঁটি, টেংরা, চান্দা, চাপিলা, কাকিলা, চেলাপাতা ও চিংড়ি মাছসহ আরও বিভিন্ন প্রজাতির মাছের শুঁটকি তৈরি করে থাকেন তারা। সুনামগঞ্জ জেলার সর্ববৃহৎ দেখার হাওর, পাগলা বাজার, লামাকাজি বাজার, সুনামগঞ্জ শহর, দিরাই, আমবাড়ি ও দোয়ারা বাজারের দোহালিয়াসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে শুঁটকি তৈরির জন্য কাঁচা মাছ আনা হয় কাকিয়ারপাড় গ্রামে। প্রথমে এসব মাছ কেটে ভিতরের নাড়িভুঁড়ি বের করা হয়। তারপর সামান্য লবণ ছিটিয়ে ভালো করে ধুয়ে নেওয়া হয়। শুঁটকি তৈরির এসব গুরুত্বপূর্ণ কাজের বেশির অংশই করে থাকেন স্থানীয় নারীরা। নারী ও পুরুষ শ্রমিকদের সম্মিলিত তত্ত্বাবধানে তিন দিন পর্যন্ত উজ্জ্বল রোদে শুকিয়ে নিয়ে বস্তাবন্দি করে প্রস্তুতকৃত শুঁটকি পাঠিয়ে দেওয়া হয় দেশের অন্যতম বৃহৎ শুঁটকির বাজার কিশোরগঞ্জের বড় বাজারে।

তারা জানান, মাছ বাচাই, কাটা ও শুকানোর কাজে দুই মাচায় পুরুষদের পাশাপাশি অন্তত ৪০ জন নারী কাজ করেন। প্রতি মণ শুঁটকি কাটা ও বাছাইয়ের জন্য প্রতি নারী শ্রমিক ১শ’ করে টাকা পান। একেকজন দিনে ৩ থেকে ৪ মন শুঁটকি কাটতে ও বাচাই করতে পারেন। এতে তাদের দৈনিক ৩/৪শ’ টাকা উপার্জন হয়। এ ছাড়াও তারা মাছের তেল সংগ্রহ করে অতিরিক্ত টাকা উপার্জন করতে পারেন। নিজ গ্রামে এমন কর্মসংস্থান তৈরি হওয়ায় পরিবার নিয়ে সচ্ছলভাবেই চলছে তাদের পরিবার।

এতসব সম্ভাবনার পরও নানান সমস্যার মধ্যে রয়েছেন দেখার হাওর পাড়ে অবস্থিত কাকিয়ারপাড় গ্রামের শুঁটকি ব্যবসায়ীরা। বছরে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করে পরোক্ষভাবে সরকারকে রাজস্ব দিলেও তাদের প্রতি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের লোকদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সরকারের অর্থনৈতিক সহযোগিতা তো দূরের কথা, সামান্য পরামর্শও কোনোদিন পাননি শুঁটকি ব্যবসায়ীরা। সরকারের সুষ্ঠু পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ সম্ভাবনাময় ব্যবসাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া বা কর্মসংস্থানের দৃষ্টান্ত স্থাপনের সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।

কাকিয়ার পাড় (নোয়াগাঁও) গ্রামের শুঁটকি মাচার স্বত্বাধিকারী সুরুজ আলী বলেন, নিজে নিজে যা জানি তা দিয়েই ব্যবসা করছি। কোনো প্রশিক্ষণ নেই৷ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা নেই। দু’একবার ব্যাংকে লোন আবেদন করে ব্যর্থ হয়েছি। যদি সরকার আমাদেরকে এ ব্যবসায় সাহায্য করতেন তাহলে আমরা দেশের চাহিদা মিটিয়ে এ শুঁটকি বিদেশেও পাঠাতে পারতাম। আমাদের মাচায় মানুষ কাজ করে। তাদের বেতন দিতে পারি। তারা টাকা পেলে আমার আনন্দ লাগে। আমি গর্ববোধ করি।

শান্তিগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে শুঁটকি চাষিদেরকে দুই গ্রুপে ভাগ করেছি। ক্রমান্বয়ে গ্রুপ বাড়ানো হবে। তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। বাঁশ, জাল, মাচা করে দেব। এলাকায় স্থানীয় শুঁটকি ব্যবসায়ীর চেয়ে কিশোরগঞ্জসহ অন্যান্য জায়গার ব্যবসায়ী বেশি। সকল শুঁটকি চাষিদের সাথে যোগাযোগ করে তাদেরকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে।