কমপ্লিট শাটডাউনে রাজধানীতে গণপরিবহন সংকট, দুর্ভোগে মানুষ
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ রেখেছে। এই কর্মসূচিতে সকালে রাজধানীতে গণপরিবহনের সংকট দেখা দিয়েছে। তাতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন কর্মজীবী মানুষ। সড়কে ছিলো না ব্যক্তিগত গাড়িও।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর মিরপুর, আগারগাঁও, মহাখালী, শ্যামলী, গাবতলী ও অন্যান্য সড়কগুলোতে তেমন কোনো গণপরিবহন ছিলো না। রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন যাত্রীরা। কিন্তু যাও বাস আসছে খুবই কম। এর মধ্যে কোনো কোনো এলাকায় বেসরকারি পরিবহনের বাস একেবারে নেই বললেই চলে। মাঝে মাঝে দু-একটি বাস আসলেও তাতেও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। বাধ্য হয়ে রিকশায় অনেকেই রিকশা, হেঁটে, সিএনজি ও পাঠাও দিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আন্দোলনকারীদের অবস্থানের কারণে কোনো যানবাহন ঢাকা থেকে বের হতে পারছে না। আবার কোনো যানবাহন ঢুকতেও পারছে না। এমনকি রিকশা, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেলও যেতে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে অনেক গাড়ি মূল পয়েন্টে আটকা পড়েছে। এর মধ্যে পণ্যবাহী গাড়ির সংখ্যা বেশি। পাশাপাশি দূরপাল্লার বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশাও রয়েছে।
এদিকে আন্দোলনকারীদের কোনো উপস্থিতি চোখে পড়েনি। একই সঙ্গে পুলিশের উপস্থিতিও সেভাবে চোখে পড়েনি।
তবে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর এখনও স্বাভাবিক হয়নি যাত্রাবাড়ী-শনিরআখড়া এলাকা। আজ বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সকাল ১০টা পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের এই অংশে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। মহাসড়কের শনিরআখড়া এলাকায় যানবাহন আটকে শিক্ষার্থীরা সেখানে ক্রিকেট খেলছেন।
গতকাল বুধবার বেলা ১১টা থেকেই আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যার পর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন এবং পুলিশ আক্রমণ করলে শিক্ষার্থীরাও পাল্টা আক্রমণ করেন। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধরা মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের কাজলা অংশের টোলপ্লাজায় আগুন ধরিয়ে দেন।
যদিও রাত সোয়া ৩টার দিকে পুলিশ-র্যাব-বিজিবির যৌথ টহলের পর যাত্রাবাড়ী-শনিরআখড়া এলাকায় যান চলাচল শুরু হলেও ফের তা দখলে নেয় আন্দোলনকারীরা। বর্তমানে মহাসড়কের উভয় পাশে যান চলাচল বন্ধ আছে।
গতকাল থেকে দফায় দফায় এ সংঘর্ষে দুই বছরের এক শিশুসহ অন্তত ৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। একজন নিহত হয়েছেন।
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঢাকাসহ সারা দেশে ২২৯ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের কোটাপদ্ধতি বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার। সরকারের এই কোটা বাতিলের পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর রুল দেন হাইকোর্ট। চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৫ জুন রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট।
পরে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন চেম্বার আদালত হয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে ৪ জুলাই। রিট আবেদনকারীপক্ষ সময় চেয়ে আরজি জানালে সেদিন আপিল বিভাগ শুনানি পিছিয়ে দেন।
পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলা হয়। এ অবস্থায় কোটা পুনর্বহালসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে গত ৯ জুলাই আবেদন করেন দুই শিক্ষার্থী।
দুই শিক্ষার্থী ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন শুনানির জন্য ১০ জুলাই আপিল বিভাগে ওঠে। শুনানি শেষে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটার বিষয়ে পক্ষগুলোকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। কিছু পর্যবেক্ষণ, নির্দেশনাসহ এ আদেশ দেয়া হয়। এই স্থিতাবস্থা চার সপ্তাহের জন্য উল্লেখ করে আপিল বিভাগ আগামী ৭ আগস্ট পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন। আন্দোলনকারীরা আদালতের আদেশ মানে না দাবি করে নির্বাহী বিভাগের আদেশের দিকে তাকিয়ে বিক্ষোভ-সমাবেশ চালিয়ে আসছেন।