বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ১০:৪৯ পূর্বাহ্ন

খবরের শিরোনাম:
স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর সঙ্গে হবিগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সৌজন্য স্বাক্ষাৎ দেশে এক বছরে ১৫ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত উপজেলা নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীরা প্রভাব বিস্তার করলে ব্যবস্থা: সিইসি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করার আগে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বিবেচনা করুন : প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল সংগ্রহে আইওএমকে আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে কষ্টার্জিত জয়ে সিরিজ বাংলাদেশের আজমিরীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচনী ব্রিফিং প্যারেড শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনযা বললেন মনোনয়ন পত্র অবৈধ হওয়া তিন প্রার্থী কাল বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় ভোট গ্রহন সিলেটে উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হলো ‘লাকড়ি তোড়া উৎসব’

খেজুর গুড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ঠাকুরগাঁওয়ের গাছিরা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ শীতের শুরুতেই রস সংগ্রহ, খেজুর রসের গুড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ঠাকুরগাঁওয়ের গাছিরা। যশোর ও রাজশাহী থেকে গাছিরা ঠাকুরগাঁওয়ে এসে খেজুর বাগান লিজ নিয়ে রস সংগ্রহ করে গুড় ও পাটালি তৈরি করে থাকেন।

শীত শুরুর সঙ্গে সঙ্গে গাছিরা খেজুর গাছ প্রস্তত করে রস আহরণ শুরু করেছেন। রস আহরণের জন্য প্রথমে হাতে দা ও কোমরে দড়ি বেঁধে খেজুর গাছে উঠে নিপুণ হাতে গাছ চাছা-ছেলা করেন। পরে ছেলা স্থানে বাঁশের কঞ্চির নল বসানো হয়। সেই নল বেয়ে নেমে আসে সুস্বাদু খেজুর রস। কাকডাকা ভোর থেকে সকাল ৮-৯টা পর্যন্ত গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে। দুপুর পর্যন্ত রস জাল দিয়ে গুড় তৈরি করা হয়। কেউ কউ আবার গুড় থেকে পাটালি তৈরি করে বিক্রির জন্য। আবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রস সংগ্রহের জন্য গাছে গাছে কলস বাঁধে। এভাবেই ব্যস্ত সময় পার করছে গাছিরা। ঠাকুরগাঁও সুগারমিলের উদ্যোগে সদর উপজেলার নারগুনে ৬০০টি ছোটো বড় খেজুরের গাছ নিয়ে গড়ে ওঠে একটি বাগান। গত বছর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হঠাৎ করে ভাইরাল হয়ে যায় বাগানটি। এর পর থেকে রস ও গুড় সংগ্রহে প্রতিদিন সকালে শহরের বাসিন্দারা ভিড় করতে থাকেন ওই বাগানে।

এদিকে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার বরচুনা গ্রামে বেশ কয়জনের উদ্যোগে গড়ে ওঠে আরেকটি খেজুরের বাগান। দু’বছর ধরে তারা বাণিজ্যিকভাবে খেজুরের রস থেকে গুড় উৎপাদন শুরু করেছে। প্রত্যন্ত গ্রামটিতে গড়ে ওঠা বাগানটি এখন সেই এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভূমিকা রাখছে বলে জানান এলাকাবাসী। তাদের অনুসরণ করে জেলার অনেকেই আগ্রহী হয়ে খেজুরের বাগান করতে চাইছে।

উদ্যোক্তারা প্রতিনিয়তই বিভিন্ন পরামর্শ নিতে আসছেন বলে জানান বাগান মালিক সোহেল রানা। রাজশাহী থেকে আসা গাছি খোকন জানান, শীতের চার মাস ৬ শতাধিক খেজুর গাছ ৩৫ হাজার টাকায় লিজ নিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১২০ কেজি গুড় উৎপাদন করছেন। আর পাইকারিতে প্রতি কেজি গুড় বিক্রি করেন ১৮০ ও খুচরা ২০০ টাকা কেজি। খেজুরের রশ ৩০০ টাকা হাড়ি ও ১০ টাকা গ্লাস বিক্রী করছেন তারা। আবার অনেকে রস কিনে নিয়ে ফেরি করে বিক্রি করেন। এ শীতের মৌসুমে রস ফেরি করে জীবিকা নির্বাহ করে এমন সংখ্যা শতাধিক। রস আর রসের তৈরি পিঠা উৎসব চলবে পুরো শীত জুড়ে। খেজুরের রস দিয়ে নানান রকম পিঠা তৈরি করা হয়। ভাপা পিঠা, পুলি পিঠা, পাঠিসাপটা, রস পিঠাসহ বিভিন্ন ধরনের পিঠা তৈরির ধুম পড়ে গেছে খেজুর গাছের রস আর গুড় দিয়ে। ঘরে ঘরে নবান্ন উৎসবে রস ও রস থেকে তৈরী গুড়, পাটালি দিয়ে তৈরি হবে সুস্বাদু খাবার। তবে যত শীত বেশি পড়ে তত রস বেশি হয়। গাছিদের মতে প্রতিদিন ৮০ থেকে ৯০টি গাছের রস থেকে তৈরি হয় ৪০ কেজি গুড়। শীত বেশি পড়লে রস উৎপাদন হবে দ্বিগুণ।

নারগুন গ্রামের গ্রামের গাছি মুকুল মিয়া জানান, খেজুরের রস পেতে হলে বেশ কিছু কাজ করতে হয়। গাছের উপরিভাগের নরম অংশকে কেটে সেখানে বসিয়ে দেয়া হয় বাঁশের তৈরি নালা। আবার পাখিরা যাতে রস না খেতে পারে আর কোন জীবাণু না ছড়াতে পারে, সেজন্য আবার জাল বিছাতে হয়। গাছের কাটা অংশ থেকে চুইয়ে-চুইয়ে রস এনে নল দিয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় জমা হয় মাটির কলসিতে। একবার গাছ কাটার পর ২-৩ দিন রস পাওয়া যায়। রসের জন্য গাছ একবার কাটার পর ৫-৬ দিন বিশ্রাম দেয়া হয়। রোদে কাটা অংশ শুকিয়ে গেলে আবার ওই অংশ চেছে রস সংগ্রহ করা হয়। আর এ কারণেই সাধারণত খেজুর গাছ পূর্ব ও পশ্চিম দিকে কাটা হয়, যাতে সূর্যের আলো সরাসরি ওই কাটা অংশে পড়ে।

বৈচুনা গ্রামের গাছি আজিজুল জানান, গাছ থেকে রস সংগ্রহের সময় মৌমাছির কামড় সইতে হয়। রস বিক্রির টাকা যখন ঘরে তুলি তখন মৌমাছির কামড়ের কথা ভুলে যাই।

এ বিষয়ে বৈরচুনার গাছি তালেব বলেন, বর্তমানে যে হারে খেজুর গাছ হারিয়ে যেতে বসেছে, তাতে এক সময় হয়তো আমাদের দেশে খেজুর গাছ থাকবে না। এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে চাইলে আমাদের সবার উচিত তালগাছের মতো বেশি বেশি খেজুর গাছ লাগানো এবং তা যত্ন সহকারে বড় করা।

নতুন করে কেউ খেজুরের বাগান করতে চাইলে বা খেজুরের গাছ রোপণে যে কোনো সহযোগিতায় পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবু হোসেন।

তিনি বলেন, এ জেলায় খেজুরের গাছ রোপণের ক্ষেত্রে তেমন একটা আগ্রহ দেখা যায় না। সবাই আম, কাঁঠাল আর লিচু নিয়েই ব্যস্ত। সব গাছেরই প্রয়োজন আছে। তিনি খেজুর বাগান উদ্যোক্তাদের স্বাগত জানান। প্রয়োজনে তারা যোগাযোগ করতে পারবেন বলে জানান তিনি।

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.