ঢাকা ১০:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুশ্চিন্তা দূর করতে মেনে চলুন কোরআনের ৭ নির্দেশনা

ধর্ম ও জীবন ডেস্ক

সুখ-দুঃখ মিলিয়েই মানুষের জীবন। দুটোই মানুষের জীবনের অংশ। ইহকালীন জীবনে কষ্ট-ক্লেশ মানুষের নিত্যসঙ্গী, তাই সাময়িক দুঃখ-কষ্ট দেখলেই হতাশ হতে নেই। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিঃসন্দেহে আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি কষ্ট-ক্লেশের মধ্যে। (সুরা : বালাদ, আয়াত : ৪)।
অর্থাৎ মানুষ সৃষ্টিগতভাবে আজীবন শ্রম ও কষ্টের মধ্যে থাকে। (ইবনে কাসির; ফাতহুল কাদির)

ফলে জীবনে চলার পথে কখনো না কখনো দুশ্চিন্তা আসবেই। তবে এতে হতাশ হওয়া যাবে না; বরং আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রেখে প্রতিটি পরিস্থিতিকে জয় করে নিতে হবে। নিম্নে এমন কিছু আমল তুলে ধরা হলো, যার মাধ্যমে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়—

১। ধৈর্য ধরা : মহান আল্লাহ মাঝেমধ্যে ভয়, ক্ষুধা, সম্পদ ও জীবনের ক্ষয়ক্ষতির মাধ্যমে তাঁর বান্দাদের পরীক্ষা করেন।

যারা তখনো মহান আল্লাহর ওপর অগাধ বিশ্বাস রেখে ধৈর্য ধারণ করে, আল্লাহ তাদের সফলতা দান করেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আর আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৫৫)

২। অল্পে তুষ্ট থাকা : আমরা প্রতি মুহূর্তে আল্লাহর লাখো নিয়ামতে ডুবে থাকি।

দুশ্চিন্তা দূর করার একটি কৌশল হলো, যা হারিয়েছি তা ভেবে দুঃখিত না হয়ে যেসব নেয়ামতে আমরা ডুবে আছি, সেগুলো স্মরণ করে আল্লাহর শুকরিয়া করা। অল্পে তুষ্ট থাকা। একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) হজরত আবু জর (রা.)-কে বলেন, আবু জর, তুমি কি সম্পদের প্রাচুর্যকেই সচ্ছলতা মনে করো? আবু জর (রা.) বলেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসুল। রাসুলুল্লাহ (সা.) এরপর বলেন, তাহলে তুমি সম্পদের স্বল্পতাকে দারিদ্র্য মনে করো? তিনি বলেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসুল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আসলে সচ্ছলতা তো হৃদয়ের সচ্ছলতাই, আর হৃদয়ের দারিদ্র্যই আসল দারিদ্র্য। (ইবনে হিব্বান : ৬৮৫)

৩। নামাজ পড়া : কখনো দুশ্চিন্তা চেপে বসলে বিচলিত না হয়ে অজু করে নামাজে দাঁড়িয়ে যাওয়া উচিত। কারণ মহান আল্লাহ নামাজের মাধ্যমে তাঁর কাছে সাহায্য চাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও…।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৫৩)

৪। ইস্তেগফার করা : কখনো কখনো আমাদের পাপের কারণে আমাদের ওপর বিভিন্ন বিপদাপদ আসে। দুশ্চিন্তা আমাদের টুঁটি চেপে ধরে। তখন মহান আল্লাহর কাছে তাওবার মাধ্যমে আমরা সেই বিপদ ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে পারি। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘অতঃপর আমি বলেছি, তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও, তিনি তো মহাক্ষমাশীল। (ফলে) তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন, তোমাদের সমৃদ্ধ করবেন ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে।’ (সুরা : নুহ, আয়াত : ৭১)

৫। আল্লাহর আশ্রয় চাওয়া : কখনো দুশ্চিন্তা আমাদের এতটাই জাপটে ধরে যে আমরা আল্লাহর রহমত থেকেও নৈরাশ হয়ে যাই। ভাবতে থাকি, যে পাপীষ্ঠ, আল্লাহ কি আমার ডাকে সাড়া দেবেন? অথচ মহান আল্লাহ নিজেই বলেছেন, ‘আর যখন আমার বান্দারা তোমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে, (তাদের বলুন) আমি তো নিশ্চয়ই নিকটবর্তী। আমি আহ্বানকারীর ডাকে সাড়া দিই, যখন সে আমাকে ডাকে। সুতরাং তারা যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমার প্রতি ঈমান আনে। আশা করা যায় তারা সঠিক পথে চলবে। (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৬)।

অতএব, কখনো দুশ্চিন্তা ঘিরে ধরলে হতাশ না হয়ে মহান আল্লাহকে ডাকতে হবে। তিনিই পারেন যাবতীয় বিপদাপদ থেকে আমাদের রক্ষা করতে।

৬। দোয়া করা : দুশ্চিন্তা থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রতিদিন নিয়ম করে রাসুল (সা.)-এর শেখানো দোয়া পড়া যেতে পারে। আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলতেন : ‘হে আল্লাহ, নিশ্চয়ই আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই—দুশ্চিন্তা, পেরেশানি, অক্ষমতা, অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা, ঋণভার ও মানুষের প্রভাবাধীন হওয়া থেকে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৩৬৯)

৭। বেশি বেশি দরুদ পাঠ : রাসুল (সা.)-এর ওপর অধিক হারে দরুদ পাঠের মাধ্যমেও আমরা দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে পারি। একবার উবাই ইবনে কাব (রা.) রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমার সবটুকু সময় আপনার ওপর দরুদ পাঠে লাগাব? তিনি বলেন, তাহলে তো তোমার চিন্তামুক্তির জন্য তা যথেষ্ট হয়ে যাবে, আর তোমার গুনাহ মাফ করা হবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৫৭)।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৭:২৮:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪
০ বার পড়া হয়েছে

দুশ্চিন্তা দূর করতে মেনে চলুন কোরআনের ৭ নির্দেশনা

আপডেট সময় ০৭:২৮:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

সুখ-দুঃখ মিলিয়েই মানুষের জীবন। দুটোই মানুষের জীবনের অংশ। ইহকালীন জীবনে কষ্ট-ক্লেশ মানুষের নিত্যসঙ্গী, তাই সাময়িক দুঃখ-কষ্ট দেখলেই হতাশ হতে নেই। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিঃসন্দেহে আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি কষ্ট-ক্লেশের মধ্যে। (সুরা : বালাদ, আয়াত : ৪)।
অর্থাৎ মানুষ সৃষ্টিগতভাবে আজীবন শ্রম ও কষ্টের মধ্যে থাকে। (ইবনে কাসির; ফাতহুল কাদির)

ফলে জীবনে চলার পথে কখনো না কখনো দুশ্চিন্তা আসবেই। তবে এতে হতাশ হওয়া যাবে না; বরং আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রেখে প্রতিটি পরিস্থিতিকে জয় করে নিতে হবে। নিম্নে এমন কিছু আমল তুলে ধরা হলো, যার মাধ্যমে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়—

১। ধৈর্য ধরা : মহান আল্লাহ মাঝেমধ্যে ভয়, ক্ষুধা, সম্পদ ও জীবনের ক্ষয়ক্ষতির মাধ্যমে তাঁর বান্দাদের পরীক্ষা করেন।

যারা তখনো মহান আল্লাহর ওপর অগাধ বিশ্বাস রেখে ধৈর্য ধারণ করে, আল্লাহ তাদের সফলতা দান করেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আর আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৫৫)

২। অল্পে তুষ্ট থাকা : আমরা প্রতি মুহূর্তে আল্লাহর লাখো নিয়ামতে ডুবে থাকি।

দুশ্চিন্তা দূর করার একটি কৌশল হলো, যা হারিয়েছি তা ভেবে দুঃখিত না হয়ে যেসব নেয়ামতে আমরা ডুবে আছি, সেগুলো স্মরণ করে আল্লাহর শুকরিয়া করা। অল্পে তুষ্ট থাকা। একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) হজরত আবু জর (রা.)-কে বলেন, আবু জর, তুমি কি সম্পদের প্রাচুর্যকেই সচ্ছলতা মনে করো? আবু জর (রা.) বলেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসুল। রাসুলুল্লাহ (সা.) এরপর বলেন, তাহলে তুমি সম্পদের স্বল্পতাকে দারিদ্র্য মনে করো? তিনি বলেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসুল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আসলে সচ্ছলতা তো হৃদয়ের সচ্ছলতাই, আর হৃদয়ের দারিদ্র্যই আসল দারিদ্র্য। (ইবনে হিব্বান : ৬৮৫)

৩। নামাজ পড়া : কখনো দুশ্চিন্তা চেপে বসলে বিচলিত না হয়ে অজু করে নামাজে দাঁড়িয়ে যাওয়া উচিত। কারণ মহান আল্লাহ নামাজের মাধ্যমে তাঁর কাছে সাহায্য চাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও…।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৫৩)

৪। ইস্তেগফার করা : কখনো কখনো আমাদের পাপের কারণে আমাদের ওপর বিভিন্ন বিপদাপদ আসে। দুশ্চিন্তা আমাদের টুঁটি চেপে ধরে। তখন মহান আল্লাহর কাছে তাওবার মাধ্যমে আমরা সেই বিপদ ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে পারি। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘অতঃপর আমি বলেছি, তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও, তিনি তো মহাক্ষমাশীল। (ফলে) তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন, তোমাদের সমৃদ্ধ করবেন ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে।’ (সুরা : নুহ, আয়াত : ৭১)

৫। আল্লাহর আশ্রয় চাওয়া : কখনো দুশ্চিন্তা আমাদের এতটাই জাপটে ধরে যে আমরা আল্লাহর রহমত থেকেও নৈরাশ হয়ে যাই। ভাবতে থাকি, যে পাপীষ্ঠ, আল্লাহ কি আমার ডাকে সাড়া দেবেন? অথচ মহান আল্লাহ নিজেই বলেছেন, ‘আর যখন আমার বান্দারা তোমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে, (তাদের বলুন) আমি তো নিশ্চয়ই নিকটবর্তী। আমি আহ্বানকারীর ডাকে সাড়া দিই, যখন সে আমাকে ডাকে। সুতরাং তারা যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমার প্রতি ঈমান আনে। আশা করা যায় তারা সঠিক পথে চলবে। (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৬)।

অতএব, কখনো দুশ্চিন্তা ঘিরে ধরলে হতাশ না হয়ে মহান আল্লাহকে ডাকতে হবে। তিনিই পারেন যাবতীয় বিপদাপদ থেকে আমাদের রক্ষা করতে।

৬। দোয়া করা : দুশ্চিন্তা থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রতিদিন নিয়ম করে রাসুল (সা.)-এর শেখানো দোয়া পড়া যেতে পারে। আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলতেন : ‘হে আল্লাহ, নিশ্চয়ই আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই—দুশ্চিন্তা, পেরেশানি, অক্ষমতা, অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা, ঋণভার ও মানুষের প্রভাবাধীন হওয়া থেকে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৩৬৯)

৭। বেশি বেশি দরুদ পাঠ : রাসুল (সা.)-এর ওপর অধিক হারে দরুদ পাঠের মাধ্যমেও আমরা দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে পারি। একবার উবাই ইবনে কাব (রা.) রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমার সবটুকু সময় আপনার ওপর দরুদ পাঠে লাগাব? তিনি বলেন, তাহলে তো তোমার চিন্তামুক্তির জন্য তা যথেষ্ট হয়ে যাবে, আর তোমার গুনাহ মাফ করা হবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৫৭)।