বুধবার, ২২ মে ২০২৪, ১২:৪১ পূর্বাহ্ন

বিএনপি এবং জামায়াতের ডাকা হরতালে উত্তাপ বাড়তে থাকে সিলেট

সিলেট প্রতিনিধিঃ খুব ভোরে শান্ত সিলেট হঠাৎ করেই সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ককটেল বিষ্ফোরণের শব্দে অশান্ত হতে থাকে। আজ রোববার বিএনপি এবং পরে জামায়াতের ডাকা ‘ডাবল’ হরতালে বেলা গড়ানোর সাথে সাথে উত্তাপ বাড়তে থাকে সিলেট নগরীতে।

যাত্রীবাহী যানবাহন ভাঙচুরের পাশাপাশি গণমাধ্যমকর্মীর মোটরযানেও চালান হামলা পিকেটাররা। ছুঁড়া হয়েছে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল।

তবে পুলিশও তাদের ঠেকাতে কঠোরভাবে রয়েছে মাঠে। যে স্থানেই বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন সেখানেই উপস্থিত হয়ে টিয়ার সেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দিচ্ছে তাদের।

হরতালের খবর সংগ্রহে মাঠে থাকা দৈনিক শ্যামল নিজস্ব প্রতিবেদক ও ফটো সাংবাদিকদের মারফত প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী-

সিলেট নগরীর মিরারবাজার এলাকায় পিকেটিং করেছে ছাত্রদল নেতা কর্মীরা। রোববার সকাল ১১টায় মিরাবাজার পয়েন্টে পিকেটিং করে ছাত্রদল নেতা কর্মীরা। ছাত্রদল নেতা কর্মীরা মিছিল দিয়ে পিকেটিং করে। মিছিল করায় মিরাবাজার এলাকার সকল দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়।

এসময় হরতাল সমর্থনকারী ছাত্রদল নেতা কর্মীরা হরতাল উপেক্ষা করে ২টি লেগুনা গাড়ি চলায় ইটপাটকেল ছুঁড়ে গাড়ি ভাঙচুর করেন।

হরতাল সমর্থনকারী ছাত্রদল নেতা কর্মীরা প্রায় আধঘন্টা মিরাবাজার এলাকায় পিকেটিং করে তারা চলে যায়।

এদিকে, বিএনপির ডাকা হরতাল সিলেটে রোববার (২৯ অক্টোবর) ঢিলেঢালাভাবে শুরু হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে। সকাল ৮টার পর থেকে বিভিন্ন স্থানে অতর্কিত পিকেটিং করছেন বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

সঙ্গে আছে জামায়াতও। তারা ভাঙচুর করছেন যানবাহন। পুলিশের দিকে ছোঁড়া হয় ইট-পাটকেল। তবে পুলিশও তাদের ঠেকাতে কঠোরভাবে রয়েছে মাঠে। যে স্থানেই বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন সেখানেই উপস্থিত হয়ে টিয়ার সেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দিচ্ছে তাদের।

শিবগঞ্জে দোকানে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ:
নগরীর শিবগঞ্জ পয়েন্টে রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় দিকে ওয়েলফুড নামীয় একটি খাদ্যবিক্রেতা প্রতিষ্ঠানে ৪/৫টি মোটরসাইকেল আরোহী পিকেটাররা প্রতিষ্ঠানে ইট-পাটকেল ছুঁড়ে। পয়েন্টে অবস্থানরত পুলিশ এগিয়ে এলে মোটরসাইকেল থেকে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে দ্রুত টিলাগড়ের দিকে চলে যায়। এর পর শিবগঞ্জ পয়েন্টে বাড়ানো হয় পুলিশের ফোর্স।

সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে যানবাহন ভাঙচুর :
সকাল ৯টার দিকে মহানগরের লন্ডনি রোডের হাজীপাড়ার মুখ থেকে ৩০-৩৫ টি মোটরসাইকেলে করে বিএনপি নেতাকর্মীরা বের হয়ে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে গিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ ১০-১২টি গাড়িতে ভাঙচুর চালান। তাদের অনেকের হাতে ছিলো লাঠি। ১৫-২০ মিনিট ভাঙচুর চালিয়ে তারা চলে যান।

 

জিন্দাবাজারে পুলিশ-বিএনপি ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া :
সিলেট মহানগরের জিন্দাবাজার এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রবিবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশের দিকে নেতাকর্মীরা ইট-পাটকেল ও তাদের দিকে পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ এসময় সাউন্ড গ্রেনেডও ফাটায়

জেলরোড পয়েন্টে ককটেল বিস্ফোরণ :
সিলেট মহানগরের জেলরোড পয়েন্টে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। রোববার সকাল সোয়া ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

মহাজনপট্টির গলি থেকে ২৫-৩০ জন বিএনপি নেতাকর্মীল মিছিল নিয়ে জেল রোড পয়েন্টে এসে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। এসময় তারা পিকেটিং শুরু করেন। তবে দ্রুত পুলিশ ঘটনাস্থলে চলে আসে এবং রাবার বুলেট ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে বিএনপ নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসময় পুলিশের দিকে ইট-পাটকের নিক্ষেপ করেন নেতাকর্মীরা। তবে বেশিক্ষণ রাস্তায় দাঁড়াননি তারা। মিছিল নিয়ে জেলরোডের দিকে চলে যান।

জিন্দাবাজার :
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সিলেট মহানগরের জিন্দাবাজারে বিএনপি নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে পিকেটিং করার চেষ্টা করলে তাদের সরিয়ে দেয় পুলিশ।

ঘটনাস্থল থেকে দুইজন সংবাদকর্মী জানান, জিন্দাবাজার পয়েন্ট ও কাজি ইলিয়াস এলাকায় সড়কে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তাঁতিপাড়ার গলি থেকে বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী হঠাৎ বের হয়ে পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। তবে পুলিশের ধাওয়ায় তারা দাঁড়াতে পারেনি রাস্তায়।

এসময় বিএনপি নেতাকর্মীদের দিকে রাবার বুলেট ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এসময় পিকেটিংকারী একজনের ফেলে যাওয়া মোটরসাইকেল পুলিশ জব্দ করে ।

দরগাহ গেইটে রিকশায় আগুন, সাংবাদিকের মোটরসাইকেল ভাঙচুর :
সিলেট মহানগরে রিকশায় আগুন দিয়ে পিকেটিং করছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। রোববার সকাল ১০টার দিকে মহানগরের দরগাহ গেইট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে

এসময় কয়েকজন সাংবাদিকের মোটরসাইকেলেও ভাঙচুর চালায় তারা।

আজ রবিবার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে বিএনপি। শনিবার (২৮ অক্টোবর) নয়াপল্টনে সমাবেশে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের পর এ সিদ্ধান্ত নেয় দলটি। শনিবার বিকালে দলীয় কার্যালয়ের নিচে হ্যান্ড মাইকে হরতালের ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এদিকে, হরতালকে কেন্দ্র করে সিলেটে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য রবিবার ভোর থেকে সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ সকল রাস্তা ও মোড়ে অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মহানগরের প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ও মোড়ে পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। সব ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঠেকাতে তারা প্রস্তুত।

দেখা গেছে- সিলেটে ভোর থেকে নিয়মিত পুলিশের পাশাপাশি বিশেষ টিম ‘ক্রাইসিস রেন্সপন্স টিম- সিআরটি’ রয়েছে মাঠে। এছাড়া সাদা পোশাকেও পুলিশ বাহিনী রয়েছে মাঠে।

লালাবাজারে গাছ ফেলে অবরোধ, ‘আগুন’!
সরকার পতনের একদফা দাবিতে ডাকা হরতালে সিলেটে সকাল থেকে বিএনপি ও জামায়াত বিভিন্ন স্থানে পিকেটিং করছে। কোথাও তারা গাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টা করছে, আবার কোথাও সড়কে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
নাশকতারোধে সড়কে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীও রয়েছে সতর্কাবস্থায়। নগরীর জিন্দাবাজারে পুলিশের সাথে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

রবিবার সকাল ১০টার দিকে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের লালাবাজারে গাছ ফেলে অবরোধ করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এতে নেতৃত্ব দেন জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক কোহিনূর আহমদ ও সহ দপ্তর সম্পাদক মাহবুব আলম।

এছাড়া প্রায় একই সময়ে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের তেতলিতে টায়ারে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ করে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা। স্থানে স্থানে পিকেটিংয়ের কারণে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক যানশূণ্য হয়ে পড়েছে। নিরাপত্তার অজুহাতে পরিবহন শ্রমিকরাও সকাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন।

হুমায়ূন রশিদ চত্বরে আ.লীগ নেতার বাস ভা ঙ চু র
সিলেটে আওয়ামী লীগ নেতার মালিকানাধীন যাত্রীবাহী একটি বাস ভাঙচুর করেছে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। হরতাল উপেক্ষা করে বাসটি যাত্রী নিয়ে দক্ষিণ সুরমা টার্মিনাল থেকে জাফলংয়ের উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে হুমায়ূন রশিদ চত্বরে পিকেটিংয়ের শিকার হয়

এসময় হরতাল সমর্থনকারী নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল ছুঁড়ে গাড়িটি ভাঙচুর করেন বলে জানিয়েছেন জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া মাহমুদ।
জাকারিয়া মাহমুদ জানান, তার মালিকানাধীন বাস ‘আল মাহমুদ পরিবহন’ সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জাফলং যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। হুমায়ূন রশিদ চত্বরে আসার পর বিএনপির নেতাকর্মীরা গাড়িটি ভাঙচুর করেন। পরে বাসটি সোবহানীঘাটস্থ পেট্রোলপাম্পের সামনে এনে রাখা হয়।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) কমিশনার মো. ইলিয়াস শরীফ বিপিএম (বার) পিপিএম বলেন- সিলেটের জনগণের সার্বিক নিরাপত্তায় আমরা মাঠে রয়েছি। হরতালকে কেন্দ্র করে কেউ নাশকতার চেষ্টা করলে আমরা কঠোরভাবে তা দমন করবো। আজ ভোর থেকে আমাদের মোবাইল টিম, সিআরটি ও সাদা পোশাকে একাধিক টিম মাঠে রয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে পুলিশের সাজোয়া যান পিসিআর।

এদিকে, স্থানে স্থানে পিকেটিংয়ের কারণে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক যানশূণ্য হয়ে পড়েছে। নিরাপত্তার অজুহাতে পরিবহন শ্রমিকরাও সকাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন। সিলেট থেকে ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার বাস।

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.