ঢাকা ১১:৩৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অতিরিক্ত রাগ নিয়ন্ত্রণ করবেন যেভাবে

লাইফস্টাইল ডেস্ক

আনন্দ, দুঃখ, বিরক্তি, ভয়, বিস্ময়ের মতো রাগও মানুষের মৌলিক একটি আবেগ। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মাঝেমধ্যে রাগ হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু রাগের প্রকাশ যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখনই ঘটে বিপত্তি। যারা শৈশব-কৈশোর থেকেই অল্পতে রেগে যান এবং সেটির অস্বাভাবিক বহিঃপ্রকাশ ঘটান, তাদের অন্যরা রগচটা বা বদরাগী মানুষ হিসেবে চেনে।

অনিয়ন্ত্রিত রাগের প্রভাব

রেগে গেলে ব্যক্তির সাধারণ জ্ঞান, নম্রতা, ভদ্রতা বোধ ও লজ্জা-সংকোচ লোপ পেতে পারে, ব্যক্তি আক্রমণাত্মক হয়ে ঘটাতে পারেন যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা। এতে ব্যক্তির নিজের বা অন্যের ক্ষতি হতে পারে। রাগের অনিয়ন্ত্রিত বহিঃপ্রকাশে জীবনযাপনের স্বাভাবিক দক্ষতা যেমন হ্রাস পেতে পারে, পারস্পরিক সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি হতে পারে, তেমনি বড় ধরনের শারীরিক ক্ষতি থেকে মৃত্যুও হতে পারে।

রাগের অনিয়ন্ত্রিত বহিঃপ্রকাশের কারণ

নিউরোসায়েন্টিস্ট ও সাইকো অ্যানালিসিসের জনক সিগমুন্ড ফ্রয়েডের মতে, মানুষের মৌলিক প্রবৃত্তিগুলোর একটি হচ্ছে নিজের প্রতি ধ্বংসাত্মক মনোভাব।

কিন্তু তা নিজের জন্য ক্ষতিকর বিধায় অবচেতনে এই প্রবৃত্তির বিপক্ষে আত্মরক্ষামূলক আচরণ হিসেবে মানুষ অন্যের প্রতি আক্রমণাত্মক হয়। ফলে এবার একটু সতর্ক হোন। রাগ করে নিজের রক্তচাপ রকেটের গতিতে না বাড়িয়ে বরং রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে শিখুন।

জেনে নিন রাগ কমানোর কিছু সহজ উপায়

১) বলার আগে ভাবুন-

রাগের মাথায় কোনও কিছু বলে ফেলা খুব সোজা। তারপরে সেই কথা নিয়ে অনুশোচনার শেষ থাকে না। কিছু বলার আগে কয়েক মুহূর্ত সময় নিন। একটু ভাবুন। অন্যদেরও ভাবার সুযোগ দিন।

২) মাথা ঠাণ্ডা হলে তবেই রাগের প্রকাশ করুন-

যখন আপনি সাফ ভাবতে পারছেন, তখনই রাগ প্রকাশ করুন। বিরক্তি প্রকাশ করুন, কিন্তু যুদ্ধের মেজাজে নয়।যত রাগই হোক, অন্যকে অপমান করা কাজের কথা নয়।

৩) কিছু ব্যায়াম করুন-

শরীর চর্চা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। রাগও নিয়ন্ত্রণে রাখে। যদি দেখেন চরচর করে বাড়ছে রাগের পারদ, তাহলে বরং কয়েক চক্কর হেঁটে আসুন।

৪ ) ছোট্ট একটা টাইমআউট নিন-

টাইমআউট শুধু ছোটদের জন্য নয়। দিনের যে সময়টা ভয়ানক স্ট্রেসের সে সময় নিজেকে কিছুটা ব্রেক দিন। নিজের জন্য শান্ত কিছু সময় বিরক্তিকর অনেক কিছু থেকে মুক্তি দেয়। রাগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

৫) সমাধান খোঁজার চেষ্টা করুন-

কী কারণে আপনি রেগে যাচ্ছেন সে বিষয়ে মাথা না ঘামিয়ে কীভাবে সমস্যার সমাধান হবে তা নিয়ে মনোযোগী হোন। বাচ্চারা ঘর অগোছাল করে রাখে বলে বিরক্ত হচ্ছেন? দরজা বন্ধ করে দিন। আপনার পার্টনার কি রোজ ডিনারে দেরি করে আসেন? সন্ধ্যে বেলা একটু ভারী খাবার খেয়ে পেট ভরিয়ে রাখুন। রাতের খাওয়াটা মাঝে মাঝে একা একা খাওয়ায় প্রাকটিস করুন।

৬) নিজের বক্তব্য সাফ জানান-

অন্যের নিন্দা বা সমালোচনা না করে নিজের পছ্ন্দ-অপছন্দ পরিস্কার করে জানান। নির্দিষ্ট করে আপনার চাহিদাটা জানান। ‘তুমি বাড়ির কোন কাজই করো না’-র বদলে বলুন ‘আমাকে সাহায্য না করে বারবার তোমার খেয়ে দেয়েই উঠে যাওয়া আমাকে কষ্ট দেয়।’’

৭) রাগ পুষে রাখবেন না-

ক্ষমা করতে শিখুন। মনের মধ্যে রাগ পুষে রেখে সবসময় খারাপ কথাই ভাবলে আখেরে ক্ষতি আপনারই। নিজের এই এক পেশে চিন্তায় ডুবে থাকলে ভাল কিছু ভাবার ক্ষমতাটাই না চলে যায়। ক্ষমা করতে শিখুন। নিজের ব্যবহার নিয়েও খুঁটিয়ে ভাবুন। সবাই সব সময় আপনার মতই ভাববে এতটাও আশা করা বোধহয় ঠিক নয়।

৮) টেনশন কমাতে হাসি-ঠাট্টার আশ্রয় নিন-

টেনশন কমাতে হাসি ঠাট্টার জুরি মেলা ভার। তবে নিজের চাপ বা রাগ কমাতে গিয়ে অন্যের অনুভূতিকে আঘাত করে ব্যঙ্গ না করাই ভাল।

৯) রিল্যাক্সড হওয়ার কিছু স্কিল প্র্যাকটিস করুন-

যদি আপনার চড়া মেজাজে লাগাম পবাতে অসুবিধা হয়, তাহলে জোরে জোরে গভীর নিঃশ্বাস ফেলুন। মজার কোনও দৃশ্য ভাবুন। গান শুনুন, বই পড়ুন, আপনার আদতে যা যা করতে ভাল লাগে সে দিকে বেশি করে মন দিন।

১০) প্রয়োজন হলে সাহায্য নিন-

যদি কোনও ভাবেই আপনার রাগ নিয়ন্ত্রণে না আসে, যদি আপনার রাগ আপনার বা অন্যদের লাগাতার ক্ষতির কারণ হয়, তাহলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৯:৪৩:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ জুলাই ২০২৪
২৭ বার পড়া হয়েছে

অতিরিক্ত রাগ নিয়ন্ত্রণ করবেন যেভাবে

আপডেট সময় ০৯:৪৩:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ জুলাই ২০২৪

আনন্দ, দুঃখ, বিরক্তি, ভয়, বিস্ময়ের মতো রাগও মানুষের মৌলিক একটি আবেগ। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মাঝেমধ্যে রাগ হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু রাগের প্রকাশ যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখনই ঘটে বিপত্তি। যারা শৈশব-কৈশোর থেকেই অল্পতে রেগে যান এবং সেটির অস্বাভাবিক বহিঃপ্রকাশ ঘটান, তাদের অন্যরা রগচটা বা বদরাগী মানুষ হিসেবে চেনে।

অনিয়ন্ত্রিত রাগের প্রভাব

রেগে গেলে ব্যক্তির সাধারণ জ্ঞান, নম্রতা, ভদ্রতা বোধ ও লজ্জা-সংকোচ লোপ পেতে পারে, ব্যক্তি আক্রমণাত্মক হয়ে ঘটাতে পারেন যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা। এতে ব্যক্তির নিজের বা অন্যের ক্ষতি হতে পারে। রাগের অনিয়ন্ত্রিত বহিঃপ্রকাশে জীবনযাপনের স্বাভাবিক দক্ষতা যেমন হ্রাস পেতে পারে, পারস্পরিক সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি হতে পারে, তেমনি বড় ধরনের শারীরিক ক্ষতি থেকে মৃত্যুও হতে পারে।

রাগের অনিয়ন্ত্রিত বহিঃপ্রকাশের কারণ

নিউরোসায়েন্টিস্ট ও সাইকো অ্যানালিসিসের জনক সিগমুন্ড ফ্রয়েডের মতে, মানুষের মৌলিক প্রবৃত্তিগুলোর একটি হচ্ছে নিজের প্রতি ধ্বংসাত্মক মনোভাব।

কিন্তু তা নিজের জন্য ক্ষতিকর বিধায় অবচেতনে এই প্রবৃত্তির বিপক্ষে আত্মরক্ষামূলক আচরণ হিসেবে মানুষ অন্যের প্রতি আক্রমণাত্মক হয়। ফলে এবার একটু সতর্ক হোন। রাগ করে নিজের রক্তচাপ রকেটের গতিতে না বাড়িয়ে বরং রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে শিখুন।

জেনে নিন রাগ কমানোর কিছু সহজ উপায়

১) বলার আগে ভাবুন-

রাগের মাথায় কোনও কিছু বলে ফেলা খুব সোজা। তারপরে সেই কথা নিয়ে অনুশোচনার শেষ থাকে না। কিছু বলার আগে কয়েক মুহূর্ত সময় নিন। একটু ভাবুন। অন্যদেরও ভাবার সুযোগ দিন।

২) মাথা ঠাণ্ডা হলে তবেই রাগের প্রকাশ করুন-

যখন আপনি সাফ ভাবতে পারছেন, তখনই রাগ প্রকাশ করুন। বিরক্তি প্রকাশ করুন, কিন্তু যুদ্ধের মেজাজে নয়।যত রাগই হোক, অন্যকে অপমান করা কাজের কথা নয়।

৩) কিছু ব্যায়াম করুন-

শরীর চর্চা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। রাগও নিয়ন্ত্রণে রাখে। যদি দেখেন চরচর করে বাড়ছে রাগের পারদ, তাহলে বরং কয়েক চক্কর হেঁটে আসুন।

৪ ) ছোট্ট একটা টাইমআউট নিন-

টাইমআউট শুধু ছোটদের জন্য নয়। দিনের যে সময়টা ভয়ানক স্ট্রেসের সে সময় নিজেকে কিছুটা ব্রেক দিন। নিজের জন্য শান্ত কিছু সময় বিরক্তিকর অনেক কিছু থেকে মুক্তি দেয়। রাগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

৫) সমাধান খোঁজার চেষ্টা করুন-

কী কারণে আপনি রেগে যাচ্ছেন সে বিষয়ে মাথা না ঘামিয়ে কীভাবে সমস্যার সমাধান হবে তা নিয়ে মনোযোগী হোন। বাচ্চারা ঘর অগোছাল করে রাখে বলে বিরক্ত হচ্ছেন? দরজা বন্ধ করে দিন। আপনার পার্টনার কি রোজ ডিনারে দেরি করে আসেন? সন্ধ্যে বেলা একটু ভারী খাবার খেয়ে পেট ভরিয়ে রাখুন। রাতের খাওয়াটা মাঝে মাঝে একা একা খাওয়ায় প্রাকটিস করুন।

৬) নিজের বক্তব্য সাফ জানান-

অন্যের নিন্দা বা সমালোচনা না করে নিজের পছ্ন্দ-অপছন্দ পরিস্কার করে জানান। নির্দিষ্ট করে আপনার চাহিদাটা জানান। ‘তুমি বাড়ির কোন কাজই করো না’-র বদলে বলুন ‘আমাকে সাহায্য না করে বারবার তোমার খেয়ে দেয়েই উঠে যাওয়া আমাকে কষ্ট দেয়।’’

৭) রাগ পুষে রাখবেন না-

ক্ষমা করতে শিখুন। মনের মধ্যে রাগ পুষে রেখে সবসময় খারাপ কথাই ভাবলে আখেরে ক্ষতি আপনারই। নিজের এই এক পেশে চিন্তায় ডুবে থাকলে ভাল কিছু ভাবার ক্ষমতাটাই না চলে যায়। ক্ষমা করতে শিখুন। নিজের ব্যবহার নিয়েও খুঁটিয়ে ভাবুন। সবাই সব সময় আপনার মতই ভাববে এতটাও আশা করা বোধহয় ঠিক নয়।

৮) টেনশন কমাতে হাসি-ঠাট্টার আশ্রয় নিন-

টেনশন কমাতে হাসি ঠাট্টার জুরি মেলা ভার। তবে নিজের চাপ বা রাগ কমাতে গিয়ে অন্যের অনুভূতিকে আঘাত করে ব্যঙ্গ না করাই ভাল।

৯) রিল্যাক্সড হওয়ার কিছু স্কিল প্র্যাকটিস করুন-

যদি আপনার চড়া মেজাজে লাগাম পবাতে অসুবিধা হয়, তাহলে জোরে জোরে গভীর নিঃশ্বাস ফেলুন। মজার কোনও দৃশ্য ভাবুন। গান শুনুন, বই পড়ুন, আপনার আদতে যা যা করতে ভাল লাগে সে দিকে বেশি করে মন দিন।

১০) প্রয়োজন হলে সাহায্য নিন-

যদি কোনও ভাবেই আপনার রাগ নিয়ন্ত্রণে না আসে, যদি আপনার রাগ আপনার বা অন্যদের লাগাতার ক্ষতির কারণ হয়, তাহলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।