ঢাকা ০৯:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

১৫ জেলায় ৪৬ জন নিহত

ডেস্ক রিপোর্ট

বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিন রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর পর্যন্ত ১৫ জেলায় ৪৮ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে মুন্সীগঞ্জে দুজন, মাগুরায় পাঁচজন, পাবনায় তিনজন, রংপুরে তিনজন, সিরাজগঞ্জে সাতজন, বরিশালে একজন, ভোলায় তিনজন নিহত, বগুড়ায় দুইজন, জয়পুরহাটে একজন, ফেনীতে পাঁচজন, কিশোরগঞ্জে ৩ জন, কুমিল্লার দেবিদ্বারে একজন নরসিংদীতে ছয় জন ও সিলেটে দুইজন নিহত হয়েছেন।

মুন্সীগঞ্জ : মুন্সীগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছেন। এ সময় ৭ জন গুলিবিদ্ধসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

রোববার (০৪ আগস্ট) মুন্সিগঞ্জ শহরের সুপার মার্কেট ও কৃষি ব্যাংক মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ, গুলিবর্ষণ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় ওই এলাকা রণক্ষেত্র পরিণত হয়।

গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল।
মাগুরা : মাগুরায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাব্বী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এছাড়া মাগুরার মোহাম্মদপুর উপজেলায় ৪ জন নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

রোববার (০৪ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে শহরের পারনানন্দুয়ালী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। রাব্বী নিহতের বিষয়ে জেলা বিএনপির নেতা অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

রংপুর : রংপুরে দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। রোববার (০৪ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রংপুর পায়রা চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, মাসুম, খায়রুল ইসলাম খসরু ও পরশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রসিকের ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হারাধন রায়। এর আগে বেলা ১১টার দিকে শহরজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় দুপক্ষই অবস্থান নেয়।

পাবনা : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে পাবনায় গুলিতে তিনজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। রোববার (০৪ আগস্ট) দুপুরে শহরের এ হামিদ রোডের ট্রাফিক মোড়ে বিক্ষোভ চলাকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

পাবনা সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। নিহতরা হলো, মহিবুল (১৬), জাহিদ (১৯) ও ফাহিম।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা শহরের ট্রাফিক মোড়ে অবস্থান নেন। এ সময় তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃত্যু হয়। তাদের সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে আন্দোলনকারীরা সদর হাসপাতাল সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।

হাসপাতালের সহকারী পরিচালক সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, গুলিবিদ্ধ তিনজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তাদের মধ্যে দুজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।

সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জে শহরের সব রুট দখলে নিয়েছে বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনকারী ছাত্ররা। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে জেলা বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় শহরের এসএস রোডে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন নিহত হয়েছেন। তারা হলেন, যুবদল নেতা রন্জু (৪০), ছাত্রদল নেতা সুমন (৩০) ও যুবদল কর্মী আব্দুল লতিব (৪২)।

রোববার (৪ আগস্ট) সকাল থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে আন্দোলনকারীরা। কয়েক ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় শহরের বাজার স্টেশন, এসএস রোড, মুজিব সড়ক, রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

সংঘর্ষে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে বলে জানা গেছে। তার পরিচয় জানা যায়নি। এ ছাড়া ৭ জন গুলিবিদ্ধসহ ১৪ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

সংঘর্ষের এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা পিছু হটলে পুরো শহর দখল করে নেয় আন্দোলনকারী ছাত্র ও বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা ড. জান্নাত আরা হেনরীর বাসা, জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়, সাবেক এমপি হাবিবে মিল্লাত মুন্নার বাসা, আওয়ামী নেতা বিমল কুমার দাসের বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

এ ছাড়া জেলা জজ আদালত, এসিল্যান্ড অফিস, মুক্তির সোপান স্মৃতিসৌধ, শিল্পকলা একাডেমিসহ শহরের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

এদিকে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে চয়ন ইসলাম এমপির বাসা ভাঙচুর করা হয়। বেলকুচি ও উল্লাপাড়া আওয়ামী লীগ অফিসে আগুন দেওয়া হয়।

সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট ডা. রতন কুমার জানান, এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ১৪ জন ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৭ জন গুলিবিদ্ধ।

সিরাজগঞ্জ সদর থানার ওসির সিরাজুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, আমরা তিনজন নিহতের খবর শুনেছি। কিন্তু নিশ্চিত হতে পারিনি।

অপরদিকে, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ভম্রকাতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লিটন (৬০), উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-আমিন (৩৫), ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম ও স্থানীয় সাংবাদিক প্রদ্বীপ ভৌমিক (৬০)।

দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলার ধানগড়া এলাকায় আ.লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সময় সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই তিনজন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর একজনের মৃত্যু হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. আমিমুল ইসলাম তৌহিদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

বরিশাল : বরিশালে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের বাড়িতে হামলার সময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আ.লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আন্দোলনকারীদের হামলায় মহানগর ১২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি টুটুল চৌধুরী নিহত হয়েছেন। পরে আন্দোলকারী প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের বাড়ির সামনে ১১টি মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছে।

ভোলা : ভোলার নতুন বাজারে আইনশৃঙ্খলনা রক্ষাকারী বাহিনী গুলিতে একজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে জসিম উদ্দিন (৭০) নামে একজন ছাতা শ্রমিকের।

এসময় আন্দোলনকারীদের হামলায় দুই পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। পরে আন্দোলনকারীরা আ.লীগ অফিস, শ্রমিক লীগ অফিস ও পৌরসভা ভাঙচুর চালিয়ে দুটি গাড়িতে আগুন দেয়। এ সময় ডিসি অফিসের দুটি গাড়িতেও আগুন দেয় তারা।

বগুড়া : বগুড়ায় অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় দুইজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন।

রোববার (০৪ আগস্ট) বগুড়ার সাতমাথায় এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। এসময় বগুড়া টিএনটি অফিস, আওয়ামী লীগ, ছাত্র ইউনিয়ন ও জাসদ অফিস, টাউন ক্লাব, সদর ভূমি অফিস ও আওয়ামী লীগ নেতার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে আগুন লাগিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা।

এদিকে আন্দোলনকারী এবং আওয়ামী লীগ কর্মীদের উপর্যুপরি ককটেল বিস্ফোরণ এবং পুলিশের টিয়ার সেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় শহরের কেন্দ্রস্থল সাতমাথা এলাকা। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করায় ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে পরে পুরো শহর।

জয়পুরহাট : জয়পুরহাটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযাগ আন্দোলনের প্রথম দিনে দফায় দফায় সংঘর্ষে মেহেদী হাসান নামে একজন নিহত হয়েছেন। এ সময় অজ্ঞাত আরও একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় কমপক্ষে ৭০ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে। আহতদের জয়পুরহাট ২৫০ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

রোববার (৪ আগস্ট) দুপুরে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল থেকে গিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয় ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় দলীয় কার্যালয়ে থাকা সংসদ সদস্য সামছুল আলম দুদু, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রাজা চৌধুরী, মীর মোয়াজ্জেম, মাহমুদ হোসেন হিমু, অন্তত ১০-১২ জন আহত হয়। তাদেরকে উদ্ধার জয়পুরহাট ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ফেনী : ফেনীতে অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থকদের সঙ্গে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে পাঁচ আন্দোলনকারী নিহত হয়েছেন। রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী মহিপাল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের নাম ও পরিচয় জানা যায়নি।

ফেনী ২৫০ শয্যা জেলারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আসিফ ইকবাল কালবেলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় তিনজন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে জেলা আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম টিটুর বাসার আগুন নেভানোর সময় দুইজন কেয়ারটেকার ও স্ট্রোক করে একজন ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। রোববার দুপুর ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে।

দেবিদ্বার (কুমিল্লা) : কুমিল্লার দেবিদ্বারে দুপক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে গুলিতে এক যুবক নিহত হয়েছেন। রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর দেড়টায় দেবিদ্বার আজগর আলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কমপক্ষে ২৪ জন আহত হয়েছেন।

নিহত যুবকের নাম আব্দুর রাজ্জাক রুবেল (৩৩)। তিনি দেবিদ্বার পৌর এলাকার বারেরা গ্রামের মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে।

রুবেলের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলী এহসান। তিনি বলেন, রুবেলের মরদেহ শনিবার দেড়টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি তার মৃত্যু হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, দেবিদ্বার নিউ মার্কেট স্বাধীনতা চত্বরে অবস্থা নেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী। স্বাধীনতা চত্বর থেকে কিছুটা দূরে অবস্থান নেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা। এ সময় দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ হন রুবেল।

নরসিংদী : অসহযাগ আন্দোলনের প্রথম দিনে নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে ছয়জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আন্দোলনকারীদের চারজন। মাধবদী থানার ওসি কামরুজ্জামান কালবেলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নিহতরা হলেন- চরদিগলদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন (৪০), নরসিংদী সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের ছোট ভাই যুবলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন (৩৮), জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য শ্রমিক লীগ নেতা মনিরুজ্জামান ভূইয়া ওরফে নাতি মনির (৪২), শ্রমিক লীগ নেতা আনিছুর রহমান সোহেল (৪০), মাধবদী পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার নওশের (৪০) ও অজ্ঞাত (৩৮)।

জানা গেছে, আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে বের হলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের প্রতিহত করার জন্য মিছিলে এলোপাতারি গুলি চালালে কমপক্ষে ৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়। আহতদের মধ্যে সুমন মিয়া (৩৫), সোহেব (৪১), আল আমিনকে (২৫) নরসিংদী সদর হাসপাতালে এবং মীর জাহাঙ্গীরকে (৩০) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপতালে পাঠানো হয়।

এ সময় উত্তেজিত আন্দোলনকারী ৪/৫ হাজার লোক আওয়ামী সমর্থকদের গুলি উপেক্ষা করে তাদের ওপর চড়াও হলে আওয়ামী সমর্থকরা দৌড়ে পালাতে থাকে। এ সময় আওয়ামী লীগের ছয়জন নেতাকর্মী দৌড়ে মাধবদী বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিম দিকের বড় মসজিদে আশ্রয় নেয়। আন্দোলনকারীরা মসজিদ থেকে ধরে বের করে এনে মসজিদের সামনেই এলোপতারি পিটিয়ে ঘটনাস্থলেই ছয়জনের মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায়।

এ ছাড়া নরসিংদী শহরের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জেলখানা মোড় চত্বরে সকল থেকে ছাত্র-জনতা জমায়েত হতে শুরু করে। বেলা ১টার দিকে তারা জেলখানা মোড় থেকে নরসিংদী স্টেডিয়াম পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত লোক সমাগম বেড়েই চলেছে।

সিলেট : সিলেটের গোলাপগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি পালনকালে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ধারাবহর হাসপাতালের সামনের ২ জন নিহত হয়েছেন। এ সংঘর্ষে পুলিশ বিজিবি ও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ ৫০ জন আহত হন। এ ছাড়া কয়েকজন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালেও চিকিৎসাধীন রয়েছে।

রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে গোলাপগঞ্জের ধারাবহরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ২ জন হলেন ব্যবসায়ী বারকোট গ্রামের মরহুম মকবুল আলীর ছেলে ব্যবসায়ী তাজ উদ্দিন (৪৩) ও উপজেলার শিলঘাটের বাসিন্দা সানি আহমদ (১৮)।

নিহতের বিষয়টি কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন নিহত তাজ উদ্দিনের আত্মীয় জাবেদ মাহমুদ। তিনি বলেন, বিকেল ২ টার দিকে ঢাকা দক্ষিণ রোডের গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে আন্দোলনকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে এক ব্যবসায়ী গুলিতে লুটিয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিক তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

জানা যায়, রোববার সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্মে কর্মসূচি পালনে সকাল ১১টার দিকে ঢাকা দক্ষিণ বাজারে শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাধলে উভয়পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। টানা প্রায় ৩ ঘণ্টা চলা সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও আহত হন। এছাড়াও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া যায়।

মৃত্যুর বিষয়টি কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন গোলাপগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শাহিন আহমদ।

এদিকে গোলাপগঞ্জেও সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করলে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও পুলিশ এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে অনেকে আহত এবং গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

লক্ষীপুর :

লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আওয়ামী লীগ ও আন্দোলনকারীরা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করে । এতে ৪ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া শতাধিক আহতের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অনেকেই মুমূর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

রোববার (৪ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১ টা থেকে শহরের ঝুমুর ও মাদাম ব্রিজ এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন কাউসার, আদনান, সাব্বীর ও মিরাজ।

লক্সীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) অরুপ পাল নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৭:০১:৩১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ অগাস্ট ২০২৪
২৯ বার পড়া হয়েছে

১৫ জেলায় ৪৬ জন নিহত

আপডেট সময় ০৭:০১:৩১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ অগাস্ট ২০২৪

বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিন রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর পর্যন্ত ১৫ জেলায় ৪৮ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে মুন্সীগঞ্জে দুজন, মাগুরায় পাঁচজন, পাবনায় তিনজন, রংপুরে তিনজন, সিরাজগঞ্জে সাতজন, বরিশালে একজন, ভোলায় তিনজন নিহত, বগুড়ায় দুইজন, জয়পুরহাটে একজন, ফেনীতে পাঁচজন, কিশোরগঞ্জে ৩ জন, কুমিল্লার দেবিদ্বারে একজন নরসিংদীতে ছয় জন ও সিলেটে দুইজন নিহত হয়েছেন।

মুন্সীগঞ্জ : মুন্সীগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছেন। এ সময় ৭ জন গুলিবিদ্ধসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

রোববার (০৪ আগস্ট) মুন্সিগঞ্জ শহরের সুপার মার্কেট ও কৃষি ব্যাংক মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ, গুলিবর্ষণ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় ওই এলাকা রণক্ষেত্র পরিণত হয়।

গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল।
মাগুরা : মাগুরায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাব্বী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এছাড়া মাগুরার মোহাম্মদপুর উপজেলায় ৪ জন নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

রোববার (০৪ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে শহরের পারনানন্দুয়ালী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। রাব্বী নিহতের বিষয়ে জেলা বিএনপির নেতা অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

রংপুর : রংপুরে দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। রোববার (০৪ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রংপুর পায়রা চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, মাসুম, খায়রুল ইসলাম খসরু ও পরশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রসিকের ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হারাধন রায়। এর আগে বেলা ১১টার দিকে শহরজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় দুপক্ষই অবস্থান নেয়।

পাবনা : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে পাবনায় গুলিতে তিনজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। রোববার (০৪ আগস্ট) দুপুরে শহরের এ হামিদ রোডের ট্রাফিক মোড়ে বিক্ষোভ চলাকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

পাবনা সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। নিহতরা হলো, মহিবুল (১৬), জাহিদ (১৯) ও ফাহিম।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা শহরের ট্রাফিক মোড়ে অবস্থান নেন। এ সময় তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃত্যু হয়। তাদের সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে আন্দোলনকারীরা সদর হাসপাতাল সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।

হাসপাতালের সহকারী পরিচালক সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, গুলিবিদ্ধ তিনজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তাদের মধ্যে দুজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।

সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জে শহরের সব রুট দখলে নিয়েছে বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনকারী ছাত্ররা। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে জেলা বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় শহরের এসএস রোডে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন নিহত হয়েছেন। তারা হলেন, যুবদল নেতা রন্জু (৪০), ছাত্রদল নেতা সুমন (৩০) ও যুবদল কর্মী আব্দুল লতিব (৪২)।

রোববার (৪ আগস্ট) সকাল থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে আন্দোলনকারীরা। কয়েক ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় শহরের বাজার স্টেশন, এসএস রোড, মুজিব সড়ক, রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

সংঘর্ষে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে বলে জানা গেছে। তার পরিচয় জানা যায়নি। এ ছাড়া ৭ জন গুলিবিদ্ধসহ ১৪ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

সংঘর্ষের এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা পিছু হটলে পুরো শহর দখল করে নেয় আন্দোলনকারী ছাত্র ও বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা ড. জান্নাত আরা হেনরীর বাসা, জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়, সাবেক এমপি হাবিবে মিল্লাত মুন্নার বাসা, আওয়ামী নেতা বিমল কুমার দাসের বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

এ ছাড়া জেলা জজ আদালত, এসিল্যান্ড অফিস, মুক্তির সোপান স্মৃতিসৌধ, শিল্পকলা একাডেমিসহ শহরের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

এদিকে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে চয়ন ইসলাম এমপির বাসা ভাঙচুর করা হয়। বেলকুচি ও উল্লাপাড়া আওয়ামী লীগ অফিসে আগুন দেওয়া হয়।

সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট ডা. রতন কুমার জানান, এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ১৪ জন ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৭ জন গুলিবিদ্ধ।

সিরাজগঞ্জ সদর থানার ওসির সিরাজুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, আমরা তিনজন নিহতের খবর শুনেছি। কিন্তু নিশ্চিত হতে পারিনি।

অপরদিকে, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ভম্রকাতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লিটন (৬০), উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-আমিন (৩৫), ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম ও স্থানীয় সাংবাদিক প্রদ্বীপ ভৌমিক (৬০)।

দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলার ধানগড়া এলাকায় আ.লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সময় সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই তিনজন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর একজনের মৃত্যু হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. আমিমুল ইসলাম তৌহিদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

বরিশাল : বরিশালে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের বাড়িতে হামলার সময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আ.লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আন্দোলনকারীদের হামলায় মহানগর ১২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি টুটুল চৌধুরী নিহত হয়েছেন। পরে আন্দোলকারী প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের বাড়ির সামনে ১১টি মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছে।

ভোলা : ভোলার নতুন বাজারে আইনশৃঙ্খলনা রক্ষাকারী বাহিনী গুলিতে একজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে জসিম উদ্দিন (৭০) নামে একজন ছাতা শ্রমিকের।

এসময় আন্দোলনকারীদের হামলায় দুই পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। পরে আন্দোলনকারীরা আ.লীগ অফিস, শ্রমিক লীগ অফিস ও পৌরসভা ভাঙচুর চালিয়ে দুটি গাড়িতে আগুন দেয়। এ সময় ডিসি অফিসের দুটি গাড়িতেও আগুন দেয় তারা।

বগুড়া : বগুড়ায় অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় দুইজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন।

রোববার (০৪ আগস্ট) বগুড়ার সাতমাথায় এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। এসময় বগুড়া টিএনটি অফিস, আওয়ামী লীগ, ছাত্র ইউনিয়ন ও জাসদ অফিস, টাউন ক্লাব, সদর ভূমি অফিস ও আওয়ামী লীগ নেতার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে আগুন লাগিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা।

এদিকে আন্দোলনকারী এবং আওয়ামী লীগ কর্মীদের উপর্যুপরি ককটেল বিস্ফোরণ এবং পুলিশের টিয়ার সেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় শহরের কেন্দ্রস্থল সাতমাথা এলাকা। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করায় ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে পরে পুরো শহর।

জয়পুরহাট : জয়পুরহাটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযাগ আন্দোলনের প্রথম দিনে দফায় দফায় সংঘর্ষে মেহেদী হাসান নামে একজন নিহত হয়েছেন। এ সময় অজ্ঞাত আরও একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় কমপক্ষে ৭০ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে। আহতদের জয়পুরহাট ২৫০ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

রোববার (৪ আগস্ট) দুপুরে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল থেকে গিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয় ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় দলীয় কার্যালয়ে থাকা সংসদ সদস্য সামছুল আলম দুদু, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রাজা চৌধুরী, মীর মোয়াজ্জেম, মাহমুদ হোসেন হিমু, অন্তত ১০-১২ জন আহত হয়। তাদেরকে উদ্ধার জয়পুরহাট ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ফেনী : ফেনীতে অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থকদের সঙ্গে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে পাঁচ আন্দোলনকারী নিহত হয়েছেন। রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী মহিপাল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের নাম ও পরিচয় জানা যায়নি।

ফেনী ২৫০ শয্যা জেলারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আসিফ ইকবাল কালবেলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় তিনজন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে জেলা আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম টিটুর বাসার আগুন নেভানোর সময় দুইজন কেয়ারটেকার ও স্ট্রোক করে একজন ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। রোববার দুপুর ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে।

দেবিদ্বার (কুমিল্লা) : কুমিল্লার দেবিদ্বারে দুপক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে গুলিতে এক যুবক নিহত হয়েছেন। রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর দেড়টায় দেবিদ্বার আজগর আলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কমপক্ষে ২৪ জন আহত হয়েছেন।

নিহত যুবকের নাম আব্দুর রাজ্জাক রুবেল (৩৩)। তিনি দেবিদ্বার পৌর এলাকার বারেরা গ্রামের মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে।

রুবেলের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলী এহসান। তিনি বলেন, রুবেলের মরদেহ শনিবার দেড়টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি তার মৃত্যু হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, দেবিদ্বার নিউ মার্কেট স্বাধীনতা চত্বরে অবস্থা নেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী। স্বাধীনতা চত্বর থেকে কিছুটা দূরে অবস্থান নেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা। এ সময় দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ হন রুবেল।

নরসিংদী : অসহযাগ আন্দোলনের প্রথম দিনে নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে ছয়জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আন্দোলনকারীদের চারজন। মাধবদী থানার ওসি কামরুজ্জামান কালবেলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নিহতরা হলেন- চরদিগলদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন (৪০), নরসিংদী সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের ছোট ভাই যুবলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন (৩৮), জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য শ্রমিক লীগ নেতা মনিরুজ্জামান ভূইয়া ওরফে নাতি মনির (৪২), শ্রমিক লীগ নেতা আনিছুর রহমান সোহেল (৪০), মাধবদী পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার নওশের (৪০) ও অজ্ঞাত (৩৮)।

জানা গেছে, আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে বের হলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের প্রতিহত করার জন্য মিছিলে এলোপাতারি গুলি চালালে কমপক্ষে ৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়। আহতদের মধ্যে সুমন মিয়া (৩৫), সোহেব (৪১), আল আমিনকে (২৫) নরসিংদী সদর হাসপাতালে এবং মীর জাহাঙ্গীরকে (৩০) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপতালে পাঠানো হয়।

এ সময় উত্তেজিত আন্দোলনকারী ৪/৫ হাজার লোক আওয়ামী সমর্থকদের গুলি উপেক্ষা করে তাদের ওপর চড়াও হলে আওয়ামী সমর্থকরা দৌড়ে পালাতে থাকে। এ সময় আওয়ামী লীগের ছয়জন নেতাকর্মী দৌড়ে মাধবদী বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিম দিকের বড় মসজিদে আশ্রয় নেয়। আন্দোলনকারীরা মসজিদ থেকে ধরে বের করে এনে মসজিদের সামনেই এলোপতারি পিটিয়ে ঘটনাস্থলেই ছয়জনের মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায়।

এ ছাড়া নরসিংদী শহরের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জেলখানা মোড় চত্বরে সকল থেকে ছাত্র-জনতা জমায়েত হতে শুরু করে। বেলা ১টার দিকে তারা জেলখানা মোড় থেকে নরসিংদী স্টেডিয়াম পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত লোক সমাগম বেড়েই চলেছে।

সিলেট : সিলেটের গোলাপগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি পালনকালে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ধারাবহর হাসপাতালের সামনের ২ জন নিহত হয়েছেন। এ সংঘর্ষে পুলিশ বিজিবি ও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ ৫০ জন আহত হন। এ ছাড়া কয়েকজন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালেও চিকিৎসাধীন রয়েছে।

রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে গোলাপগঞ্জের ধারাবহরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ২ জন হলেন ব্যবসায়ী বারকোট গ্রামের মরহুম মকবুল আলীর ছেলে ব্যবসায়ী তাজ উদ্দিন (৪৩) ও উপজেলার শিলঘাটের বাসিন্দা সানি আহমদ (১৮)।

নিহতের বিষয়টি কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন নিহত তাজ উদ্দিনের আত্মীয় জাবেদ মাহমুদ। তিনি বলেন, বিকেল ২ টার দিকে ঢাকা দক্ষিণ রোডের গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে আন্দোলনকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে এক ব্যবসায়ী গুলিতে লুটিয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিক তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

জানা যায়, রোববার সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্মে কর্মসূচি পালনে সকাল ১১টার দিকে ঢাকা দক্ষিণ বাজারে শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাধলে উভয়পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। টানা প্রায় ৩ ঘণ্টা চলা সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও আহত হন। এছাড়াও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া যায়।

মৃত্যুর বিষয়টি কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন গোলাপগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শাহিন আহমদ।

এদিকে গোলাপগঞ্জেও সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করলে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও পুলিশ এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে অনেকে আহত এবং গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

লক্ষীপুর :

লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আওয়ামী লীগ ও আন্দোলনকারীরা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করে । এতে ৪ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া শতাধিক আহতের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অনেকেই মুমূর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

রোববার (৪ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১ টা থেকে শহরের ঝুমুর ও মাদাম ব্রিজ এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন কাউসার, আদনান, সাব্বীর ও মিরাজ।

লক্সীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) অরুপ পাল নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।