ঢাকা ০৮:৪৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পানিতে ডুবে যাওয়া দুই শিশুর শেষ ঠিকানা হলো কালনী-কুশিয়ারায়

কনৌজ কান্তি ব্যানার্জী,আজমিরীগঞ্জ প্রতিনিধিঃ

সমাজপতিদের পায়ে পড়ে কান্না করেও মন গলাতে পারেননি নিহত প্রলয়ের পিতা গোবিন্দ দাস। অবশেষে পঞ্চায়েতের তোপের মুখে মাটি চাপা দেয়া সন্তানের লাশ উত্তোলন করে বস্তায় ভরে নদীতে ভাসিয়ে দেন।

আজমিরীগঞ্জ বদলপুর ইউনিয়নের পাহাড়পুরে ফুটবল খেলা শেষে সোমেশ্বরী পুকুরে স্নান করতে নেমে ডুবে যাওয়া দুই শিশু প্রলয় দাস (৭) ও সুর্য দাস (৬) এর শেষ ঠিকানা হয়েছে কালনী-কুশিয়ারা নদীতে। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির তোপের মুখে মরদেহ বস্তায় ভরে নদীতে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন দুই শিশুর পিতা গোবিন্দ দাস,ও রুবেল দাস।

গোবিন্দ দাস বলেন, শনিবার দুপুর ১২টার দিকে আমার সাত বছরের ছেলে প্রলয় ও আমার প্রতিবেশী রুবেল দাসের ছয় বছর বয়সী ছেলে সুর্য দাস অন্যান্য শিশুদের সাথে মাহমুদপুর মাঠে ফুটবল খেলা শেষে মাঠের কাছে থাকা সোমেশ্বরী পুকুরে গোসল করতে নামে। গোসলের এক পর্যায়ে প্রলয় ও সূর্য পা পিছলে পুকুরের গভীর পানিতে তলিয়ে মারা যায়। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে আমি আমার ছেলেকে পাহাড়পুর মহাশ্মশানের দেয়াল সংলগ্ন মাটির নিচে সমাহিত করি।

কিন্তু গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক দিপেশ দাস ও কোষাধ্যক্ষ অসিত সরকারসহ গ্রামের মুরব্বিরা আমাকে ডেকে লাশ তুলে নদীতে ভাসিয়ে দিতে বলেন। আমি লাশ না তোলার জন্য গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষসহ উপস্থিত সবার হাতে পায়ে ধরে কান্নাকাটি করলেও তারা আমার কথা শুনেননি।

অবশেষে পঞ্চায়েত কমিটির চাপে বাধ্য হয়ে সন্ধ্যায় আমি ছেলের লাশ তুলে নদীতে ভাসিয়ে দেই। সূর্য দাসের পিতা রুবেল দাস
জানান, শ্মশানে গোবিন্দ দাসের ছেলের লাশ সমাহিত করতে বাঁধা দেয়ার বিষয়টি জানার পর বাধ্য হয়ে আমার ছেলে সূর্যের লাশ বস্তায় ভরে নদীতে ভাসিয়ে দেই। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক দিপেশ দাস বলেন, এটি আমার একার সিদ্ধান্ত নয়, গ্রাম কমিটির সবার সিদ্ধান্ত।

কোষাধ্যক্ষ অসিত সরকার বলেন, গ্রামের পঞ্চায়েত কমিটির সিদ্ধান্ত হলো শ্মশানের পরিবেশ পরিস্কার রাখার জন্য পাশে কোন সমাধি করা যাবে না। এই সিদ্ধান্ত এলাকার সবার জন্য, আমার একার নয়। বদলপুর ইউপি চেয়ারম্যান সুসেনজিৎ চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি লোকমুখে শুনেছি।

ঘটনাটি অমানবিক। শ্মশান তো মানুষের সৎকারের জন্যই। এখানে সমাহিত করা হলে শ্মশান পরিচ্ছন্নতার বিষয় কেন আসবে।

আজমিরীগঞ্জ থানার ওসি মোঃ ডালিম আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখছি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মৃত দুই শিশুর ছবি

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৮:৩৪:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ জুলাই ২০২৪
১৪৪ বার পড়া হয়েছে

পানিতে ডুবে যাওয়া দুই শিশুর শেষ ঠিকানা হলো কালনী-কুশিয়ারায়

আপডেট সময় ০৮:৩৪:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ জুলাই ২০২৪

সমাজপতিদের পায়ে পড়ে কান্না করেও মন গলাতে পারেননি নিহত প্রলয়ের পিতা গোবিন্দ দাস। অবশেষে পঞ্চায়েতের তোপের মুখে মাটি চাপা দেয়া সন্তানের লাশ উত্তোলন করে বস্তায় ভরে নদীতে ভাসিয়ে দেন।

আজমিরীগঞ্জ বদলপুর ইউনিয়নের পাহাড়পুরে ফুটবল খেলা শেষে সোমেশ্বরী পুকুরে স্নান করতে নেমে ডুবে যাওয়া দুই শিশু প্রলয় দাস (৭) ও সুর্য দাস (৬) এর শেষ ঠিকানা হয়েছে কালনী-কুশিয়ারা নদীতে। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির তোপের মুখে মরদেহ বস্তায় ভরে নদীতে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন দুই শিশুর পিতা গোবিন্দ দাস,ও রুবেল দাস।

গোবিন্দ দাস বলেন, শনিবার দুপুর ১২টার দিকে আমার সাত বছরের ছেলে প্রলয় ও আমার প্রতিবেশী রুবেল দাসের ছয় বছর বয়সী ছেলে সুর্য দাস অন্যান্য শিশুদের সাথে মাহমুদপুর মাঠে ফুটবল খেলা শেষে মাঠের কাছে থাকা সোমেশ্বরী পুকুরে গোসল করতে নামে। গোসলের এক পর্যায়ে প্রলয় ও সূর্য পা পিছলে পুকুরের গভীর পানিতে তলিয়ে মারা যায়। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে আমি আমার ছেলেকে পাহাড়পুর মহাশ্মশানের দেয়াল সংলগ্ন মাটির নিচে সমাহিত করি।

কিন্তু গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক দিপেশ দাস ও কোষাধ্যক্ষ অসিত সরকারসহ গ্রামের মুরব্বিরা আমাকে ডেকে লাশ তুলে নদীতে ভাসিয়ে দিতে বলেন। আমি লাশ না তোলার জন্য গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষসহ উপস্থিত সবার হাতে পায়ে ধরে কান্নাকাটি করলেও তারা আমার কথা শুনেননি।

অবশেষে পঞ্চায়েত কমিটির চাপে বাধ্য হয়ে সন্ধ্যায় আমি ছেলের লাশ তুলে নদীতে ভাসিয়ে দেই। সূর্য দাসের পিতা রুবেল দাস
জানান, শ্মশানে গোবিন্দ দাসের ছেলের লাশ সমাহিত করতে বাঁধা দেয়ার বিষয়টি জানার পর বাধ্য হয়ে আমার ছেলে সূর্যের লাশ বস্তায় ভরে নদীতে ভাসিয়ে দেই। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক দিপেশ দাস বলেন, এটি আমার একার সিদ্ধান্ত নয়, গ্রাম কমিটির সবার সিদ্ধান্ত।

কোষাধ্যক্ষ অসিত সরকার বলেন, গ্রামের পঞ্চায়েত কমিটির সিদ্ধান্ত হলো শ্মশানের পরিবেশ পরিস্কার রাখার জন্য পাশে কোন সমাধি করা যাবে না। এই সিদ্ধান্ত এলাকার সবার জন্য, আমার একার নয়। বদলপুর ইউপি চেয়ারম্যান সুসেনজিৎ চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি লোকমুখে শুনেছি।

ঘটনাটি অমানবিক। শ্মশান তো মানুষের সৎকারের জন্যই। এখানে সমাহিত করা হলে শ্মশান পরিচ্ছন্নতার বিষয় কেন আসবে।

আজমিরীগঞ্জ থানার ওসি মোঃ ডালিম আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখছি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মৃত দুই শিশুর ছবি