শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৩১ অপরাহ্ন

‘আদুভাইদের’ দখলে হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদল!

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের এক কমিটিতেই কেটে গেছে প্রায় অর্ধযুগ। দুই বছরের জন্য অনুমোদিত কমিটির এখন গুনে গুনে ৬ বছর পার। এরই মধ্যে জেলা ছাত্রদলের অনেক শীর্ষ পদধারী নেতারাই এখন বিবাহিত। এছাড়াও কমিটির বেশির ভাগ নেতাকর্মীই শেষ হয়ে গেছে ছাত্রত্ব। যেন ‘আদুভাইদের’ দখলে জেলা ছাত্রদল।

যাদের ছাত্রত্ব ছিল তাদের মধ্যে অনেকেরই আবার কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নির্ধারিত বয়সের সময়সীমা শেষ। আবার অনেকেই দেশের বাইরে থেকেও হাকিয়ে নিয়েছেন জেলা ছাত্রদলের পদ। আবার অনেকেই পদবঞ্চিত হয়ে পাড়ি জমিয়েছেন দেশের বাইরে। কেউ কেউ যুবদল আবার কেউ স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অন্যান্য কমিটিতে স্থান করে নিয়েছেন। যে কারণে বিষয়টি নিয়ে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে ত্যাগী, নির্যাতিত ও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে। এছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে নতুন কমিটি না হওয়ায় একদিকে যেমন নতুন নেতৃত্ব পাচ্ছে না অন্যদিকে নিষ্ক্রিয় হয়েও পড়েছে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সবচেয়ে বৃহৎ ভ্যানগার্ড হিসেবে পরিচিত ছাত্রদল।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৩ অক্টোবর এমদাদুল হক ইমরানকে সভাপতি, রুবেল আহমেদ চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক ও শাহ্ রাজিব আহমেদ রিংগনকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১০ সদস্য বিশিষ্ট জেলা ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সংসদ। আংশিক কমিটি ঘোষণার দুই বছর পর ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ৪৮১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। এরই মধ্যে প্রায় অর্ধযুগ অতিবাহিত।

জেলা ছাত্রদলের কমিটি প্রায় অর্ধযুগ অতিক্রম করলেও এরই মধ্যে গ্রুপিং ছিল তুঙ্গে। সভাপতি, সিনিয়র সহ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ অনেকেই দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীসহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করেছেন আলাদা ব্যানারে। দুই বছরের কমিটি ৬ বছর অতিক্রম করলেও বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়নি এ কমিটি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলা ছাত্রদলের অন্তত ১০-১২ জন নেতা জেলা যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের জেলা কমিটিতে নিয়েছেন পদ।

এদিকে, বিভিন্ন ইউনিট ছাত্রদলের অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী জেলা কমিটিতে ঠাঁই পেতে অপেক্ষা রয়েছেন। কারও কারও ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পথে।

এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাহবুব জানান ‘এই কমিটি প্রায় অর্ধযুগ হয়ে গেছে, সঠিক নেতৃত্ব না থাকার কারণে জেলা ছাত্রদল এখন কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। আমরা আশা করি কেন্দ্রীয় ছাত্রদল ত্যাগী ও নির্যাতিতদের মূল্যায়ন করে অচিরেই হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণা করবেন’।

জেলা ছাত্রদলে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাফিজুল ইসলাম জানান, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রদলের নতুন কমিটির দাবি জানিয়ে আসছি। দলকে সুসংগঠিত করতে অচিরেই নতুন নেতৃত্বের দাবি জানাচ্ছি।’

জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র সহ সভাপতি মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘বছরের পর বছর একই কমিটি থাকার কারণে ত্যাগী নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। দীর্ঘদিন যাবত নতুন কমিটি না পাওয়ায় সাংগঠিনকভাবেও জেলা ছাত্রদল অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের দাবী দ্রুত যেন নতুন কমিটি দেয়া হয়।

জেলা ছাত্রদলের সভাপতি এমদাদুল হক ইমরান জানান, তৃণমূল নেতা-কর্মীদের যেমন দাবি কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটির। আমরাও চাই ওয়ার্ড থেকে শুরু করে জেলা পর্যন্ত ভোটের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব বেরিয়ে আসুক। কয়েক মাসের মধ্যেই জেলার সকল ইউনিটের কাউন্সিল সম্পন্ন করে জেলার কাউন্সিলের প্রস্ততি নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল বলেন, বর্তমানে সারাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু জেলা কমিটি পর্যন্ত ইলেকশনের মাধ্যমে গঠন করা হচ্ছে। সিলেকশন এর মাধ্যমে ছাত্রদলের কোন কমিটি গঠন করা হবে না। প্রথমেই ইউনিয়ন কমিটি সম্মেলন এর মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইউনিয়ন কমিটির ভোটে উপজেলার নেতৃত্ব নির্বাচিত করা হবে। আর উপজেলার নেতৃবৃন্দ ভোটের মাধ্যমে জেলা কমিটির নেতা নির্বাচিত করবেন।

তিনি বলেন- ‘হবিগঞ্জে বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে মামলায় অধিকাংশ নেতাকর্মী আসামি হওয়ায় বর্তমানে জেলা ছাত্রদলের কার্যক্রম স্থবির। সম্পতি পুলিশ সংঘর্ষের মামলায় ছাত্রদলের উল্লেখযোগ্য নেতাকর্মীরা কারান্তরীণ ছিলেন। আমরা আশা করছি ২-৩ মাসের মধ্যই কাউন্সিলের মাধ্যমে হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্ব আসবে।’

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.