শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:০৭ অপরাহ্ন

ঐতিহাসিক বদর দিবস আজ বদরের যুদ্ধ ছিল ইমানের পরীক্ষা

শায়েস্তাগঞ্জের বাণী ডেস্ক ,সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র রমজানের আজ সতের তারিখ। আজকের দিনটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইসলামের ইতিহাসের এক যুগান্তকারী ঘটনা। শুধু ইসলামের নয়, মানব সভ্যতার ইতিহাসে অসাধারণ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী এ দিনটি। যে ঘটনায় বিশ্ববাসীর সামনে নতুন অধ্যায়ের পাতা খুলে যায় এবং সত্য ও মিথ্যার চিরন্তন দ্বন্দ্বের মোড় ঘুরে যায়। আজ ঐতিহাসিক বদর দিবস। মুসলিম বাহিনীর মুহাজিরদের ইমানের অগ্নিপরীক্ষা। ৬২৪ খ্রিস্টাব্দের ১৭ মার্চ মোতাবেক দ্বিতীয় হিজরির ১৭ রমজান মদিনা থেকে ৮০ মাইল দূরে ঐতিহাসিক বদর নামক স্থানে সংঘটিত এক সম্মুখ যুদ্ধ। এ যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে মুসলমানদের প্রথম সশস্ত্র যুদ্ধ।

কুরাইশদের আক্রমণ ঠেকাতেই এই যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। এ যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর নেতৃত্ব দেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তার চাচা হজরত হামযা ইবনে আবদুল মুত্তালিব এবং হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু। আর মুশরিক বাহিনীর নেতৃত্ব দেয় আবু জেহেল (আমর ইবনে হিশাম) এবং আবু সুফিয়ান।

নব গঠিত মদিনা রাষ্ট্রের জন্য বদর যুদ্ধে জয়লাভ, যুদ্ধের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক। এ যুদ্ধে স্বল্পসংখ্য নিরস্ত্র ও দুর্বল ৩১৩ জন মুসলমান মক্কার ১ হাজার সশস্ত্র প্রশিক্ষিত কাফের যোদ্ধার মোকাবিলায় বিজয় অর্জন করে। আল্লাহ তাআলা এ যুদ্ধ সম্পর্কে কুরআনে বলেন, ‘নিশ্চয়ই দুটি দলের মোকাবিলার মধ্যে তোমাদের জন্য নিদর্শন ছিল। একটি দল আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করে। আর অপর দল ছিল কাফেরদের। এরা স্বচক্ষে তাদেরকে দ্বিগুণ দেখছিল। আর আল্লাহ যাকে নিজের সাহায্যের মাধ্যমে শক্তি দান করেন। এরই মধ্যে শিক্ষণীয় রয়েছে দৃষ্টি সম্পন্নদের জন্য। (সুরা ইমরান : আয়াত ১৩)

বদর যুদ্ধ ছিল মুসলিম মুহাজিরদের জন্য ইমানের অগ্নিপরীক্ষা। কারণ, সদ্য ছেড়ে আসা তাদের আপন রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধে ছিল এ যুদ্ধ। ইমানের পরীক্ষায় তারা জয় লাভ করেছিল। এ সকল মুহাজির নিজের আত্মীয়-স্বজনদের পরিহার করে আল্লাহ এবং তার রাসুলকেই বেশি ভালোবেসে ছিলেন। যার প্রমাণও তারা দিয়েছিলেন ঐতিহাসিক বদর প্রান্তরে অনুষ্ঠিত যুদ্ধের ময়দানে।

ইসলামের প্রথম যুদ্ধে আল্লাহ তাআলা মুসলিম বাহিনীকে বিজয় দান করেন। যুদ্ধের প্রক্কালে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাফিরদের উদ্দেশ্য করে ‘শাহাদাতিল ওঝুহ’ বলে বালু নিক্ষেপ করেন। বদর যুদ্ধের বিজয় সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সুতরাং তোমরা তাদেরকে হত্যা করনি, বরং আল্লাহই তাদেরকে হত্যা করেছেন। আর আপনি মাটির মুষ্ঠি নিক্ষেপ করেননি, যখন তা নিক্ষেপ করেছিলেন, বরং তা নিক্ষেপ করেছিলেন আল্লাহ স্বয়ং যেন ইমানদারদের প্রতি ইহসান করতে পারেন যথার্থভাবে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ শ্রবণকারী; পরিজ্ঞাত। (সুরা আনফাল : আয়াত ১৩)

এ যুদ্ধে মক্কার কুরাইশদের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৭০ জন সৈন্য নিহত হয় এবং সমান সংখ্যক লোক বন্দি হয়। আর মুসলমানদের পক্ষে মাত্র ৬ জন আনসার এবং ৮ জন মুহাজিরসহ ১৪ জন শাহাদাতবরণ করেন।

বদর যুদ্ধ ইসলাম এবং মুসলমানদের জন্য এক ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। ইসলাম যে শিক্ষা মুসলমানদের প্রতিনিয়ত দিয়ে আসছে। আর তা হলো- সব কাজে ‘তাওয়াক্কালতু আ’লাল্লাহ’ আল্লাহর ওপর অগাধ বিশ্বাস এবং ভরসা। বিপদ-আপদসহ সর্বাবস্থায় আল্লাহর ওপর আস্থাশীল হওয়াই হলো বদরের ঐতিহাসিক সুমহান শিক্ষা।

এই দিনটি মুসলমানদের স্মরণ করিয়ে দেয় আল্লাহর নবীর সাথীদের নিষ্ঠা ও আত্মত্যাগের চেতনার কথা, আর প্রতিজ্ঞা করতে শেখায় চরম কঠিন মুহূর্তেও অবিচল থাকার। যারা এমনটি করতে পারে, তাদের জন্য রয়েছে সাফল্যের সুসংবাদ। তাকওয়া অর্জনের মাস মুসলমানদের তাওয়াক্কুলেরও শিক্ষা দেয়। আল্লাহর কাছে নিজেকে সঁপে দেয়ার ও তার প্রতি নির্ভরতার অকল্পনীয় প্রতিদান লাভের আহ্বান জানায় সতেরই রমজান

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.