ঢাকা ০৯:২১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কারফিউয়ের কারণে বিপাকে জেলার নিম্ন আয়ের মানুষ

শায়েস্তাগঞ্জের বাণী ডেস্ক ,

চলমান পরিস্থিতিতে চুনারুঘাটসহ জেলার নিম্ন আয়ের মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন। কারফিউ থাকার কারণে দীর্ঘ ৬দিন ঘর থেকে বের হতে না পারায় অনেকে আয় রোজগার করতে না পারায় চুলায় আগুন জ্বলছে না। এখন কারফিউ শিথিল কিন্তু ঘর থেকে বের হলেও কোনো কর্ম মিলছে না। ফলে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষকে খালি হাতে ঘরে ফিরতে হয়। যারা দিন আনে দিন খায় তারাই বেশি সমস্যায় পড়েছেন।

বিশেষ করে দিনমজুর, কৃষক, শ্রমিক, রিকশাওয়ালাসহ নিত্য পেশার মানুষ একেবারেই নিরুপায়। আজ শায়েস্তাগঞ্জ নতুনব্রিজ এলাকায় দেখা হয় চালক শহিদ মিয়ার সঙ্গে। তিনি গাড়ি চালিয়ে সংসার চালান। ২ ছেলে, ৪ মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে তার সংসার। তিনি জানান, ৫ দিন ধরে গাড়ি চালাতে পারায় ঘরের খাবার ফুরিয়ে গেছে। চাল-ডালসহ কিছুই নেই।

সোহাগ মিয়া পণ্য উঠা নামার কাজ করেন। গত ১৯ জুলাই থেকে কোন পন্যবাহি গাড়ি আসেনি। সব আড়ত ও গুদাম বন্ধ রয়েছে। ঢুকছে না পণ্যবাহী কোনো ট্রাক। নেই লোডিং-আনলোডিংয়ের কাজ। তাই কয়দিন ধরে তিনি বেকার হয়ে পড়েছেন। ধার-দেনা করে কোনো রকমে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনে পরিবারের সদস্যদের আহার জোগানোর ব্যবস্থা করলেও এখন ধারকর্জও পাওয়া যাচ্ছে না।

সোহাগ মিয়া নন, নির্মাণ শ্রমিক, পরিবহণ শ্রমিক ও দোকানের কর্মচারীসহ নানা পেশায় মানুষ চরম দুঃসহ পরিস্থিতির মুখোমুখি। বৃহস্পতিবার শায়েস্তাগঞ্জ, বাহুবলের মিরপুর ও চুনারুঘাট এলাকার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, কারফিউর কারণে বেশির ভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিলো। যেখানে স্বাভাবিক সময়ে লোকজনের ভিড় লেগেই থাকত সেখানে একবারের সুনশান নীরবতা।

বৃহস্পতিবার নতুনব্রিজ বিকেলে দেখা গেছে ট্রাকের কোনো সারি নেই, কিছু শ্রমিককে দেখা গেছে অলস সময় পার করছেন। তাদেরই একজন জিয়াউর। তিনি কারফিউর প্রভাবে তার পরিবারের দুর্দশার কথা তুলে ধরেন। জনজীবন স্থবির হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন জেলার শায়েস্তাগঞ্জ, বাহুবলের মিরপুর ও চুনারুঘাট সহ জেলার বিভিন্ন স্থানে হোটেল-রেস্তোরাঁর শ্রমিক, গৃহকর্মী ও হকারসহ নিম্ন আয়ের মানুষ।

বিভিন্ন রুটে দূরপাল্লার যানবাহন দীর্ঘদিন থাকার পর গতকাল থেকে কিছুটা স্বাভাবিক করায়েছে। এরআগে দিনমজুর ও পরিবহণ সংশ্লিষ্ট শ্রমিকরা আর্থিক সংকটে পড়েছেন। ভ্রাম্যমাণ চা-বিস্কুট বিক্রেতা, ফল বিক্রেতা, ভাসমান শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের শ্রমজীবীরা পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কাজের সন্ধানে বের হলেও কাজ পাওয়া যায়নি ৬দিন । ফলে অভাব অনটনে অনেক খেটে-খাওয়া সাধারণ মানুষ।

অপরদিকে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন উদ্যোক্তারা। ইন্টারনেট সম্পর্কিত সব ধরনের ব্যবসা টানা ৬দিন একেবারে বন্ধ থাকার পর গতকাল থেকে ওয়াইফাই কিছুটা চালু হয়েছে তবে কমেনি দুর্ভোগ । এতে এসব ব্যবসায়ীর আয়রোজগার শূন্যের ঘরে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ী নেতারা দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক না করলে আন্দোলনের কথা জানিয়েছেন কিছু ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি স্থানীয় স্বল্প আয়ের মানুষের অবস্থাও বেশ খারাপ। সবকিছু বন্ধ থাকায় এবং ভয়ের পরিবেশ বিরাজ করায় বাইরে কোনো কাজই পাচ্ছেন না তারা।

চুনারুঘাটের বিভিন্ন চা বাগানে চা পাতা উত্তোলন ও চায়ের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শ্রমিকরা বাগানে কাজ করতে না পারায় পাচ্ছেন না মজুরি। তা ছাড়া এসব শ্রমিকের অনেকেই সংসারের ব্যয়ভার মেটাতে বাইরে বিভিন্ন কাজ করে থাকেন। সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। একই অবস্থা কৃষিজমিতে কাজ করা কৃষক ও কৃষি শ্রমিকদের। ফসল উৎপাদন ও বাজারে পাঠানো নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন তারা। ভয়ে অনেকেই জমিতে কাজ করতে যাচ্ছেন না। আবার কারও ঘরে ফসল থাকলেও কারফিউর মাঝে সেগুলো বাজারে নিয়ে যেতে পারছেন না।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আবুল কালাম জানান, নিষেধাজ্ঞার কারণে ৬দিন ধরে দোকান খুলতে পারিনি। ৬দিন কঠিন সময় পার করেছি। কঠিন হয়ে পড়ে বাজার করাও। অপরদিকে সবজি বাজারেও আগুন অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে বাজার সদাই করা খুবই কঠিন। টেলিকম ব্যবসায়ী সাহাব উদ্দিন জানান, ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় ছয়দিন ধরে ব্যবসা বন্ধ ছিলো। প্রায় অর্ধকোটি টাকার লেনদেন বন্ধ হয়ে পড়ে। এতে ব্যবসায়িক লোকসান লক্ষাধিক টাকা। এভাবে অনেক ব্যবসায়ীর পুঁজি শেষ হয়ে গেছে।

চুনারুঘাট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি ছিদ্দিকুর রহমান মাসুদ জানান, ৫-৬ দিন ধরে দোকান বন্ধ। তারা কোনো আন্দোলন-সংঘাতে নেই। তাদের কোনো অপরাধ না থাকলেও না খেয়ে মরার পথ হয়েছে। ব্যবসায়ীরা ট্যাক্স দিয়ে ব্যবসা করেন। তাদের কেন ব্যবসা করার নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত হবে না? দোকান না খুললে দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারীর বেতন দেওয়া যাবে না। সব মিলিয়ে তাদের ব্যবসাই শেষ হয়ে গেছে।

স্থানীয় এক রিকশাচালক জানান, রাজনীতির মারপ্যাঁচে গরিবের জীবন শেষ। কয়েকদিন ধরে পথে নামলেও যাত্রী পাচ্ছেন না। ঘরে বউ-বাচ্চা না খেয়ে মরার অবস্থা। তারা এমনভাবে আর কয়দিন টিকতে পারবেন, তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় আছেন।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৮:৩০:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪
২৫ বার পড়া হয়েছে

কারফিউয়ের কারণে বিপাকে জেলার নিম্ন আয়ের মানুষ

আপডেট সময় ০৮:৩০:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪

চলমান পরিস্থিতিতে চুনারুঘাটসহ জেলার নিম্ন আয়ের মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন। কারফিউ থাকার কারণে দীর্ঘ ৬দিন ঘর থেকে বের হতে না পারায় অনেকে আয় রোজগার করতে না পারায় চুলায় আগুন জ্বলছে না। এখন কারফিউ শিথিল কিন্তু ঘর থেকে বের হলেও কোনো কর্ম মিলছে না। ফলে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষকে খালি হাতে ঘরে ফিরতে হয়। যারা দিন আনে দিন খায় তারাই বেশি সমস্যায় পড়েছেন।

বিশেষ করে দিনমজুর, কৃষক, শ্রমিক, রিকশাওয়ালাসহ নিত্য পেশার মানুষ একেবারেই নিরুপায়। আজ শায়েস্তাগঞ্জ নতুনব্রিজ এলাকায় দেখা হয় চালক শহিদ মিয়ার সঙ্গে। তিনি গাড়ি চালিয়ে সংসার চালান। ২ ছেলে, ৪ মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে তার সংসার। তিনি জানান, ৫ দিন ধরে গাড়ি চালাতে পারায় ঘরের খাবার ফুরিয়ে গেছে। চাল-ডালসহ কিছুই নেই।

সোহাগ মিয়া পণ্য উঠা নামার কাজ করেন। গত ১৯ জুলাই থেকে কোন পন্যবাহি গাড়ি আসেনি। সব আড়ত ও গুদাম বন্ধ রয়েছে। ঢুকছে না পণ্যবাহী কোনো ট্রাক। নেই লোডিং-আনলোডিংয়ের কাজ। তাই কয়দিন ধরে তিনি বেকার হয়ে পড়েছেন। ধার-দেনা করে কোনো রকমে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনে পরিবারের সদস্যদের আহার জোগানোর ব্যবস্থা করলেও এখন ধারকর্জও পাওয়া যাচ্ছে না।

সোহাগ মিয়া নন, নির্মাণ শ্রমিক, পরিবহণ শ্রমিক ও দোকানের কর্মচারীসহ নানা পেশায় মানুষ চরম দুঃসহ পরিস্থিতির মুখোমুখি। বৃহস্পতিবার শায়েস্তাগঞ্জ, বাহুবলের মিরপুর ও চুনারুঘাট এলাকার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, কারফিউর কারণে বেশির ভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিলো। যেখানে স্বাভাবিক সময়ে লোকজনের ভিড় লেগেই থাকত সেখানে একবারের সুনশান নীরবতা।

বৃহস্পতিবার নতুনব্রিজ বিকেলে দেখা গেছে ট্রাকের কোনো সারি নেই, কিছু শ্রমিককে দেখা গেছে অলস সময় পার করছেন। তাদেরই একজন জিয়াউর। তিনি কারফিউর প্রভাবে তার পরিবারের দুর্দশার কথা তুলে ধরেন। জনজীবন স্থবির হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন জেলার শায়েস্তাগঞ্জ, বাহুবলের মিরপুর ও চুনারুঘাট সহ জেলার বিভিন্ন স্থানে হোটেল-রেস্তোরাঁর শ্রমিক, গৃহকর্মী ও হকারসহ নিম্ন আয়ের মানুষ।

বিভিন্ন রুটে দূরপাল্লার যানবাহন দীর্ঘদিন থাকার পর গতকাল থেকে কিছুটা স্বাভাবিক করায়েছে। এরআগে দিনমজুর ও পরিবহণ সংশ্লিষ্ট শ্রমিকরা আর্থিক সংকটে পড়েছেন। ভ্রাম্যমাণ চা-বিস্কুট বিক্রেতা, ফল বিক্রেতা, ভাসমান শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের শ্রমজীবীরা পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কাজের সন্ধানে বের হলেও কাজ পাওয়া যায়নি ৬দিন । ফলে অভাব অনটনে অনেক খেটে-খাওয়া সাধারণ মানুষ।

অপরদিকে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন উদ্যোক্তারা। ইন্টারনেট সম্পর্কিত সব ধরনের ব্যবসা টানা ৬দিন একেবারে বন্ধ থাকার পর গতকাল থেকে ওয়াইফাই কিছুটা চালু হয়েছে তবে কমেনি দুর্ভোগ । এতে এসব ব্যবসায়ীর আয়রোজগার শূন্যের ঘরে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ী নেতারা দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক না করলে আন্দোলনের কথা জানিয়েছেন কিছু ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি স্থানীয় স্বল্প আয়ের মানুষের অবস্থাও বেশ খারাপ। সবকিছু বন্ধ থাকায় এবং ভয়ের পরিবেশ বিরাজ করায় বাইরে কোনো কাজই পাচ্ছেন না তারা।

চুনারুঘাটের বিভিন্ন চা বাগানে চা পাতা উত্তোলন ও চায়ের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শ্রমিকরা বাগানে কাজ করতে না পারায় পাচ্ছেন না মজুরি। তা ছাড়া এসব শ্রমিকের অনেকেই সংসারের ব্যয়ভার মেটাতে বাইরে বিভিন্ন কাজ করে থাকেন। সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। একই অবস্থা কৃষিজমিতে কাজ করা কৃষক ও কৃষি শ্রমিকদের। ফসল উৎপাদন ও বাজারে পাঠানো নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন তারা। ভয়ে অনেকেই জমিতে কাজ করতে যাচ্ছেন না। আবার কারও ঘরে ফসল থাকলেও কারফিউর মাঝে সেগুলো বাজারে নিয়ে যেতে পারছেন না।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আবুল কালাম জানান, নিষেধাজ্ঞার কারণে ৬দিন ধরে দোকান খুলতে পারিনি। ৬দিন কঠিন সময় পার করেছি। কঠিন হয়ে পড়ে বাজার করাও। অপরদিকে সবজি বাজারেও আগুন অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে বাজার সদাই করা খুবই কঠিন। টেলিকম ব্যবসায়ী সাহাব উদ্দিন জানান, ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় ছয়দিন ধরে ব্যবসা বন্ধ ছিলো। প্রায় অর্ধকোটি টাকার লেনদেন বন্ধ হয়ে পড়ে। এতে ব্যবসায়িক লোকসান লক্ষাধিক টাকা। এভাবে অনেক ব্যবসায়ীর পুঁজি শেষ হয়ে গেছে।

চুনারুঘাট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি ছিদ্দিকুর রহমান মাসুদ জানান, ৫-৬ দিন ধরে দোকান বন্ধ। তারা কোনো আন্দোলন-সংঘাতে নেই। তাদের কোনো অপরাধ না থাকলেও না খেয়ে মরার পথ হয়েছে। ব্যবসায়ীরা ট্যাক্স দিয়ে ব্যবসা করেন। তাদের কেন ব্যবসা করার নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত হবে না? দোকান না খুললে দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারীর বেতন দেওয়া যাবে না। সব মিলিয়ে তাদের ব্যবসাই শেষ হয়ে গেছে।

স্থানীয় এক রিকশাচালক জানান, রাজনীতির মারপ্যাঁচে গরিবের জীবন শেষ। কয়েকদিন ধরে পথে নামলেও যাত্রী পাচ্ছেন না। ঘরে বউ-বাচ্চা না খেয়ে মরার অবস্থা। তারা এমনভাবে আর কয়দিন টিকতে পারবেন, তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় আছেন।