ঢাকা ০৯:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হবিগঞ্জে বিলুপ্তির পথে বাবুই পাখি

নিজস্ব প্রতিবেদক

হবিগঞ্জে হাওর পাহাড় নদীর সাথে যুক্ত হয়েছে শিল্পাঞ্চল। ফসলি জমি আবাদ করে একের পর এক গড়ে উঠছে শিল্প প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়ি। এরসাথে হারিয়ে যাচ্ছে তাল, নারিকেল, সুপারি ও খেজুরসহ নানা প্রজাতির গাছ। বাবুই পাখি আর তাদের নিপুণ বাসা বোনার কথা কার না জানা।

হবিগঞ্জে এখন আর তেমন একটা চোখে পড়ে না বাবুই পাখি ও তার নিজের তৈরি দৃষ্টিনন্দন সেই ছোট্ট বাসা তৈরির নৈসর্গিক দৃশ্য। সে দৃশ্য যেনো হারিয়ে যেতে বসেছে। তাল, নারিকেল ও খেজুর গাছ কমে যাওয়ায় আবাস তৈরির স্থান পাচ্ছে না বাবুই পাখিরা। অথচ প্রকৃতির ভারসাম্য ধরে রাখতে এ বুনন শিল্পী পাখি ও তার শিল্প টিকিয়ে রাখা দরকার। জেলায় একসময় তিন প্রজাতির বাবুই পাখি দেখা যেতো।

এরমধ্যে বাংলা ও দাগি বাবুই এখন বিলুপ্তির পথে। টিকে আছে কিছু দেশি বাবুই। বাসা তৈরির জন্য বাবুই পাখির পছন্দের তাল, নারিকেল, সুপারি ও খেজুর গাছ কমতে থাকায় আবাসস্থল সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়াও কৃষিকাজে কীটনাশক ব্যবহার করায় দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে এ পাখি। তালগাছ আর বাবুই পাখির বাসা এ যেন একই বৃন্তে দুটি ফুল। একটিকে বাদ দিয়ে অপরটিকে নিয়ে ভাবা যায় না।

শুধু তালগাছকে নিয়ে ভাবলে, বাবুই পাখির বাসা এমনিতেই যেনো চোখে ভেসে আসে। অথচ একসময় বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে সারি সারি উঁচু তালগাছ দেখা যেতো। আর সেই তালগাছের পাতায় পাতায় দেখা যেতো বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা। যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে আরো বাড়িয়ে তুলতো। দেখে মনে হতো তাল গাছ যেন তার কানে দুল পড়ে আছে। কিন্তু এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না।

জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে জানা যায়, একসময় যেসব গ্রামে সারিসারি তালগাছ ছিলো, সেইসব তালগাছের পাতায় পাতায় মোড়ানো থাকতো বাবুই পাখির বাসা। পাশাপাশি পাখির কিচিরমিচির শব্দে গ্রামাঞ্চল মুখরিত থাকতো। সেইসব গ্রামে এখন আর তালগাছও নেই, বাবুই পাখির বাসাও নেই। ১৪-১৫ বছর আগেও গ্রামের রাস্তা-ঘাট, পুকুরপাড় ও মাঠের মধ্যে সারিসারি তালগাছ ছিলো।

আষাঢ় মাস আসার আগে থেকেই বাবুই পাখি বাসা বুনতে শুরু করতো। তখন কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত থাকতো পুরো গ্রাম। এখন হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি তালগাছ চোখে পড়ে। এখন আর মুখরিত হয়না কিচিরমিচির শব্দে গ্রামবাংলার জনপদ।

পরিবেশপ্রেমিকদের মতে, নির্বিচারে বৃক্ষনিধন, কীটনাশকের অপব্যবহার, শিকারিদের দৌরাত্ম্য, অপরিকল্পিত শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, মানববসতি বাড়ায় ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে তালগাছ ও বাবুই পাখি বিলুপ্ত হতে বসেছে।

তবে জেলার চুনারুঘাট উপজেলার নরপতি এলাকায় পাকা সড়ক, বিভিন্ন গ্রাম ও পাহাড়ি অঞ্চলে কয়েকটি তালগাছে বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা দেখা গেছে। যা একনজর দেখতে পথচারী ও শিক্ষার্থীরা একটু হলেও থমকে দাঁড়ায়।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল মনে করেন, আত্মনির্ভরশীলতার প্রতীক প্রকৃতির সুন্দর সৃষ্টি বাবুই পাখি টিকিয়ে রাখা জরুরি। এজন্য বেশি করে তাল, খেজুর ও নারকেল গাছ রোপণ করতে হবে। সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া না হলে বাবুই পাখির বাসা তৈরির গল্প শুধু বই-পুস্তকেই থেকে যাবে।

হবিগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোঃ আব্দুল কাদের বলেন, সকল বন্যপ্রাণিই একটি নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে বাস করে থাকে। মানুষের কোলাহল থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করে। প্রকৃতির ভারসাম্য ধরে রাখতে এ পাখি টিকিয়ে রাখা জরুরী। এজন্য জেলার স্থানে স্থানে বেশি করে তাল, নারকেল ও খেজুর গাছ রোপণ এবং সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ১১:৫৪:১৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪
৪ বার পড়া হয়েছে

হবিগঞ্জে বিলুপ্তির পথে বাবুই পাখি

আপডেট সময় ১১:৫৪:১৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪

হবিগঞ্জে হাওর পাহাড় নদীর সাথে যুক্ত হয়েছে শিল্পাঞ্চল। ফসলি জমি আবাদ করে একের পর এক গড়ে উঠছে শিল্প প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়ি। এরসাথে হারিয়ে যাচ্ছে তাল, নারিকেল, সুপারি ও খেজুরসহ নানা প্রজাতির গাছ। বাবুই পাখি আর তাদের নিপুণ বাসা বোনার কথা কার না জানা।

হবিগঞ্জে এখন আর তেমন একটা চোখে পড়ে না বাবুই পাখি ও তার নিজের তৈরি দৃষ্টিনন্দন সেই ছোট্ট বাসা তৈরির নৈসর্গিক দৃশ্য। সে দৃশ্য যেনো হারিয়ে যেতে বসেছে। তাল, নারিকেল ও খেজুর গাছ কমে যাওয়ায় আবাস তৈরির স্থান পাচ্ছে না বাবুই পাখিরা। অথচ প্রকৃতির ভারসাম্য ধরে রাখতে এ বুনন শিল্পী পাখি ও তার শিল্প টিকিয়ে রাখা দরকার। জেলায় একসময় তিন প্রজাতির বাবুই পাখি দেখা যেতো।

এরমধ্যে বাংলা ও দাগি বাবুই এখন বিলুপ্তির পথে। টিকে আছে কিছু দেশি বাবুই। বাসা তৈরির জন্য বাবুই পাখির পছন্দের তাল, নারিকেল, সুপারি ও খেজুর গাছ কমতে থাকায় আবাসস্থল সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়াও কৃষিকাজে কীটনাশক ব্যবহার করায় দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে এ পাখি। তালগাছ আর বাবুই পাখির বাসা এ যেন একই বৃন্তে দুটি ফুল। একটিকে বাদ দিয়ে অপরটিকে নিয়ে ভাবা যায় না।

শুধু তালগাছকে নিয়ে ভাবলে, বাবুই পাখির বাসা এমনিতেই যেনো চোখে ভেসে আসে। অথচ একসময় বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে সারি সারি উঁচু তালগাছ দেখা যেতো। আর সেই তালগাছের পাতায় পাতায় দেখা যেতো বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা। যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে আরো বাড়িয়ে তুলতো। দেখে মনে হতো তাল গাছ যেন তার কানে দুল পড়ে আছে। কিন্তু এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না।

জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে জানা যায়, একসময় যেসব গ্রামে সারিসারি তালগাছ ছিলো, সেইসব তালগাছের পাতায় পাতায় মোড়ানো থাকতো বাবুই পাখির বাসা। পাশাপাশি পাখির কিচিরমিচির শব্দে গ্রামাঞ্চল মুখরিত থাকতো। সেইসব গ্রামে এখন আর তালগাছও নেই, বাবুই পাখির বাসাও নেই। ১৪-১৫ বছর আগেও গ্রামের রাস্তা-ঘাট, পুকুরপাড় ও মাঠের মধ্যে সারিসারি তালগাছ ছিলো।

আষাঢ় মাস আসার আগে থেকেই বাবুই পাখি বাসা বুনতে শুরু করতো। তখন কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত থাকতো পুরো গ্রাম। এখন হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি তালগাছ চোখে পড়ে। এখন আর মুখরিত হয়না কিচিরমিচির শব্দে গ্রামবাংলার জনপদ।

পরিবেশপ্রেমিকদের মতে, নির্বিচারে বৃক্ষনিধন, কীটনাশকের অপব্যবহার, শিকারিদের দৌরাত্ম্য, অপরিকল্পিত শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, মানববসতি বাড়ায় ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে তালগাছ ও বাবুই পাখি বিলুপ্ত হতে বসেছে।

তবে জেলার চুনারুঘাট উপজেলার নরপতি এলাকায় পাকা সড়ক, বিভিন্ন গ্রাম ও পাহাড়ি অঞ্চলে কয়েকটি তালগাছে বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা দেখা গেছে। যা একনজর দেখতে পথচারী ও শিক্ষার্থীরা একটু হলেও থমকে দাঁড়ায়।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল মনে করেন, আত্মনির্ভরশীলতার প্রতীক প্রকৃতির সুন্দর সৃষ্টি বাবুই পাখি টিকিয়ে রাখা জরুরি। এজন্য বেশি করে তাল, খেজুর ও নারকেল গাছ রোপণ করতে হবে। সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া না হলে বাবুই পাখির বাসা তৈরির গল্প শুধু বই-পুস্তকেই থেকে যাবে।

হবিগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোঃ আব্দুল কাদের বলেন, সকল বন্যপ্রাণিই একটি নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে বাস করে থাকে। মানুষের কোলাহল থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করে। প্রকৃতির ভারসাম্য ধরে রাখতে এ পাখি টিকিয়ে রাখা জরুরী। এজন্য জেলার স্থানে স্থানে বেশি করে তাল, নারকেল ও খেজুর গাছ রোপণ এবং সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।