আমাদের রান্না করে উঁকি মেরে তাকানোর চেষ্টা করবেন না, ভারতের উদ্দেশ্যে আমীরে জামায়াত
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগ এদেশে ভোটের গণহত্যা করেছিল। দেশকে বিভক্ত করে কবরস্থানের শান্তি তারা কায়েম করেছিল। দেশকে শ্বশান বা কবস্থানে পরিণত করেছিল। কারণ কবরস্থানে কোনো জীবিত মানুষ থাকে না। জামায়াত-শিবিরসহ বিরোধী দলগুলোকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। কিন্তু কোনো আদর্শিক দলকে নিঃশেষ করা যায় না তা তারা বুঝেনি
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের উদ্যোগে আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াত আমীর বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগিবৈঠা দিয়ে হামলা করে মানুষকে হত্যা করে তাদের লাশে উপর আওয়ামী সন্ত্রাসীরা নৃত্য করেছিল। ক্ষমতায় গিয়ে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের হত্যা করেছিল। গর্বের একটা বাহিনীর নাম বদলে দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ মানে বর্ডারের চৌকিদার। জামায়াতকে দিয়ে শুরু করে সব বিরোধী দলের উপর তারা নির্যাতন করলো। আমাদের শীর্ষ ১১ জন নেতাকে খুন করা হলো।
সবগুলো অফিস তালাবদ্ধ করে রাখা, বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া ও নিবন্ধন কেড়ে নেয়া হলো। শেষ পর্যন্ত আমাদের নিষিদ্ধ করা হলো। এতো যন্ত্রনা বুকে নিয়ে আমরা বলেছি এই দেশকে আমরা ভালোবাসি, মানুষকে ভালোবাসি। আমরা ব্যক্তিগতভাবে কোনো প্রতিশোধ নেব না। তবে প্রত্যেকটা অন্যায় ও অপকর্মের বিচার হোক আমরা দাবি করতেই থাকবো।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ধর্ম-দল, স্বাধীনতার পক্ষের-বিপক্ষের এমন বিভিন্ন ভাগে জাতিকে বিভক্ত করে রেেেখ আওয়ামী লীগ ফায়দা নিয়েছিল। কিন্তু আমাদের কাছে কোনো মেজরিটি-মাইনোরিটি বলতে কিছু নাই। যারা বাংলাদেশে জন্ম নিয়েছেন আমরা সবাই মিলে সমান নাগরিক অধিকার ভোগ করতে চাই।
ভারতকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা আমাদের প্রতিবেশী। আপনারা শান্তিতে থাকুন আমরা সেটা চাই। আপনাদের পাকঘরে (রান্নাঘরে) কি রান্না করবেন আমরা জিজ্ঞেস করি না। আমাদের পাকঘরে (রান্নাঘরে) উঁকি মেরে তাকানোর চেষ্টা করবেন না। আমাদেরকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি শিক্ষা দিতে হবে না। যুগ যুগ ধরে এদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আমরা এখানে কোনো দুষ্কৃতিকারীকে মতলব হাসিল করতে দেব না।
জামায়াত আমীর বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ক্রেডিট এককভাবে কারো দাবি করা ঠিক হবে না। অনেকে ক্রেডিট দাবি করেছেন, তারা অন্যায় করেছেন। এই ক্রেডিট ১৮ কোটি মানুষের। শহীদরা কখনো দলীয় ভাগবাটোয়ারায় পড়ে না। শহীদরা জাতির গর্বিত সন্তান, জাতীয় বীর। তাদেরকে দলীয় পরিচয়ে পরিচিত করা অন্যায়। ওরা জাতির সম্পদ।
তিনি জাতীর কাছে জামায়াতের স্পষ্ট অঙ্গীকার তুলে ধরে বলেন, আমরা চাই না জাতি আর বারবার প্রতারিত হোক। আমরা চাই ঘুস, দুর্নীতি এবং চাঁদাবাজ মুক্ত একটি বাংলাদেশ। আল্লাহ সুযোগ দিলে আমরা সাম্যের বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। বৈষম্যকে নির্বাসনে পাঠাবো। আমরা মেধার স্বীকৃতি প্রদান করবো। যুবকদের হাতকে কর্মীর হাতে পরিণত করবো।
একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়ার জন্য আসুন আমরা দল-ধর্মের উর্ধ্বে উঠে জাতির স্বার্থে এক হই। আমি আপনাদেরকে কথা দিচ্ছি, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য আমাদেরকে যদি একটু ছোটও হতে হয় আমরা সেই ছোট হওয়ার জন্য প্রস্তুত। আমরা বিভক্ত জাতি চাই না।
মৌলভীবাজর জেলা জামায়াতের আমীর ইঞ্জিনিয়ার সাহেদ আলীর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারী মু. ইয়ামীর আলীর সঞ্চালনায় কর্মী সম্মেলনে বিেেশষ অতিথির বক্তব্য দেন, কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এড. এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমীর ও কেন্দ্র্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর মো. ফখরুল ইসলাম ও সিলেট জেলা আমীর মাওলানা হাবিুবুর রহমান।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, হবিগঞ্জ জেলা আমীর ও কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার সদস্য কাজী মাওলানা মুখলিছুর রহমান, মৌলভীবাজার জেলার সাবেক আমীর ও কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার সদস্য দেওয়ান সিরাজুল ইসলাম মতলিব ও মো. আবদুল মান্নান, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফয়জুল করিম ময়ূন, খেলাফত মজলিসের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব অধ্যাপক মাওলানা আবদুস সবুর,
মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুর রহমান, ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগর সভাপতি শরিফ মাহমুদ, জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ও পল্টন থানা আমীর শাহীন আহমদ খান, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আমিনুল ইসলাম, ছাত্রশিবিরের মৌলভীবাজার শহর শাখার সভাপতি তারেক আজিজ, মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি হাফেজ আলম হোসাইন,
মৌলভীবাজার পৌর জামায়াতের আমীর ও জেলা কর্মপরিষদ সদস্য হাফেজ মাওলানা তাজুল ইসলাম, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য ও মৌলভীবাজার জেলার সদর উপজেলা আমীর মো. ফখরুল ইসলাম, বড়লেখা উপজেলার আমীর মো. এমদাদুল ইসলাম, রাজনগর উপজেলার আমীর আবুর রাইয়ান শাহীন, কুলাউড়া উপজেলার আমীর অধ্যাপক আব্দুল মুনতাজিম, জুড়ী উপজেলার আমীর আব্দুল হাই হেলাল, শ্রীমঙ্গল উপজেলার আমীর মাও. ইসমাঈল হোসেন, কমলগঞ্জ উপজেলা আমীর মো. মাসুক মিয়া প্রমুখ।