বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ০৯:০৭ অপরাহ্ন

ওয়ারিশান ও এসএ খতিয়ান জ্বালিয়াতি বিরুদ্ধে চার্জশীট প্রদান করল পিবিআই

ষ্টাফ রিপোর্টার ঃ নোয়াপাড়ার নিরীহ নারী ন্যায় বিচারের আশায় আসামীদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে সিআর-৩৭৪/২৩ইং মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআই, হবিগঞ্জ এ প্রেরণ করলে উক্ত মামলার তদন্তের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন পুলিশ ইন্সপেক্টর শরিফ মোঃ রেজাউল করিম। দীর্ঘদিন তদন্ত কার্যক্রম শেষ করে বিগত ২৯/১/২০২৪ইং তারিখে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করেন।
উক্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায় ইটাখোলা মৌজার আরএস রেকর্ড গেজেট প্রকাশিত হয় ৭/২/২০১৯ খ্রি. তারিখে। এবং ৪৬১৩/১৭ইং হেবা দলিলটি রেজিষ্টি করা হয় ১৯/৯/২০১৭ইং তারিখে। তাই আরএস রেকর্ড এর খাজানার রশিদ ও গেজেটকৃত আরএস খতিয়ান না থাকায় বাধ্যতামূলক এসএ খতিয়ান ও খাজনা রশিদ দাখিল করতে গিয়ে আসামীগণ প্রতারণার উদ্দেশ্যে জ্বালিয়াতির আশ্রয় নেয়। প্রকৃতপক্ষে এসএ ২৭০২ দাগের বাড়ি রকম ভূমিটির ৪৬১৩/১৭ইং হেবা দলিল দাতাগণের পিতামহ ইব্রাহিম এর নামে এসএ রেকর্ড না থাকায় দলিল দাতাগণ ও দলিল গ্রহিতা মোঃ হাবিবুর রহমান দলিল লিখক মিজানুর রহমানের পরামর্শ ও সহযোগীতায় ইটাখোলা মৌজার এসএ ২৭০২,২৭০৩ ও ২৭০৫ দাগের মালিক হিসাবে ইব্রাহিম মিয়া মোট ৯২ শতকের এসএ ২১৭ খতিয়ান সৃষ্টি করিয়া মিথ্যা দলিল সৃজন করে। উক্ত জ্বাল এসএ খতিয়ানটি হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মহাফেজ খানা থেকে বিগত ১৭/১০/১৬ইং তারিখে মোঃ আব্দুস শহীদ ও প্রিয়বত চাকমা স্বাক্ষরিত সত্যায়িত কপি (যাহা জ্বাল কপি)। যাহা ১নং আসামী কর্তৃক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট (কগ-৬),মাধবপুর,হবিগঞ্জ আদালতে সিআর ১৫/২৩ইং মামলার আরজির সাথে দাখিল করেন। পরবর্তীতে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রেকর্ড রুম শাখা থেকে আরআরডিসি, জনাব নাভিদ সারোয়ার স্বাক্ষরিত প্রত্যয়ন পত্রে জানানো হয় যে, উক্ত ইটাখোলা মৌজার এসএ ২৭০২,২৭০৩ ও ২৭০৫ দাগ যুক্ত এসএ ২১৭ খতিয়ানটি সঠিক নয়। অর্থ্যাৎ উক্ত এসএ ২১৭ খতিয়ানটি জ্বাল জ্বালিয়াতি করে সৃষ্টি করা হইয়াছে।
যদিও আরএস রেকর্ডে ৪৬১৩/১৭ইং দলিলের দাতাগণের পিতা আব্দুর রহমানের নামে উক্ত ২৭০২ দাগ হইতে আরএস ২৯০৭ দাগ সৃষ্টি হইয়া ৬ শতক আরএস ডিপি ১২৫ খতিয়ানে তশদিককৃত খতিয়ান প্রাপ্ত হন। দলিল দাতাগণের পিতার মৃত্যুর পর ওয়ারিশ মূলে দাতাগণ উক্ত ২৯০৭ দাগের ৬ শতকের মধ্যে ৩.৭৫ শতকের মালিক। কিন্তু দাতাগণ গ্রহিতা হাবিবুর রহমানের বরাবরে বাদীনী রেহানার অংশ সহ ৭.৫ শতক রেজিষ্ট্রি হেবা দলিল মূলে হস্তান্তর করেন।


পরবর্তীতে ৬/৮/২০১৮ইং তারিখে বাদীনির পিতার ৮ জন ওয়ারিশের মধ্যে ২ জনকে মৃত উল্লেখ করে ৪২৭৭/১৮ইং সাফ কবলা দলিলে ২৯০৪ দাগের বাদীর অংশ সহ পুরো ৪ শতক ভূমি ১-৬ নং আসামীগন বাদীনীর আপন ভাই বোন দাতা সাজিয়া ৭নং আসামী আপন চাচা আব্দুল হকের বরাবরে হস্তান্তর করেন। যদিও প্রকৃতভাবে আব্দুর রহমানের মৃত্যুও পর তার ৮ জন ওয়ারিশের মধ্যে শুধুমাত্র তার স্ত্রী হাছেনা বেগম মৃত, বাকী ১ পুত্র ও ৬ কন্যা জীবিত। তদন্তকারী কর্মকর্তা, চারাভাঙ্গা, মাধবপুর সাবরেজিষ্টার অফিস থেকে উক্ত দলিল রেজিষ্টারী করার সময় দাখিল করা ওয়ারিশ সনদ সংগ্রহ করতে ব্যার্থ হন। পরবর্তীতে উপজেলা ভূমি অফিস ১২৩৫/২২ইং ও ১৮৫৪/২২ইং নামজারী আবেদনে সাথে নামজারী আবেদনকারী ১নং ও ৭নং আসামী একই রকম ভাবে ১০৪ নং স্মারকে ৯নং নোয়াপাড়া ইউ/পি থেকে সংগ্রহ বাদীনীর পিতার ওয়ারিশ সনদ সংগ্রহ করে উক্ত জ্বাল জালিয়াতি করে
বাদীনির পিতার ৮ জন ওয়ারিশের মধ্যে ২ জনকে মৃত উল্লেখ করে একটি জ্বাল ওয়ারিশ সনদ দাখিল করার সংবাদ প্রাপ্ত হন। পরবর্তীতে বাদীনীর মাধ্যমে জেলা প্রশাসক, হবিগঞ্জ এর রেকর্ড রুম শাখায় উক্ত নামজারী আবেদনের সাথে দাখিল করা জ্বাল ওয়ারিশ সনদ ও নামাজারীর আদেশের নকল সংগ্রহ করেন। যার ফলে তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামীদের বিরুদ্ধে ওয়ারিশান সনদ ও এসএ খতিয়ান জ্বাল জালিয়াতি করে ৪৬১৩/১৭ইং হেবা রেজিষ্ট্রি দলিল ৪২৭৭/১৮ইং সাফকবলা দলিল সৃজন করার অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় তদন্ত কারী পিবিআই এর পুলিশ ইন্সপেক্টর শরিফ মোঃ রেজাউল করিম আসামীদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন।
উক্ত মামলার বাদী দাবী করেন শুধু মামলার আরজি বর্নীত বিষয়ের বাহিরে আরো অনেক বিষয়ে আসামীগণ জ্বালিয়াতি করেছে। বাদীনী রেহানা আক্তার তার স্বামীর সাথে সৌদিআরবে থাকাবস্থায় তার পিতাকে ভুল বুঝিয়ে তার পিতার জাতীয় পরিচয় পত্র জ্বালিয়াতি করে প্রতারণা করে ২০১৪ইং সালে ১নং আসামী মোঃ হাবিবুর রহমান নোয়াপাড়া বাজার এলজিইডি সড়কের পাশে দোকান ঘর সহ ১০.৫ শতক হেবা দলিল করে আত্বস্বাত করেন। তার পিতার বসত বাড়ির কিছু অংশ ভূল বসত ২৯০৬ দাগের ৬ শতক তার চাচা আব্দুল হকের নামে আরএস রেকর্ড হওয়ায় উক্ত ৬ শতক ভূমি বাদীনি সহ তার অন্য ৫ বোন ও ১ ভাই এর নামে ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও ভাই হাবিব ও চাচা আব্দুল হক বাদীনিকে বঞ্চিত করার জন্য এসএ খতিয়ান জ্বালিয়াতি করে ৪২৭৮/১৮ইং রেজিষ্টারী হেবা দলিলে দাতা আব্দুল হক গ্রহিতা হাবিবুর রহমানের নামে সাফ কবলা দলিলে হস্তান্তর করে হাবিব এককভাবে ৬ শতক বাড়ি রকম ভূমি আত্বস্বাত করে।
পরবর্তীতে ১নং আসামী অনেক অনুরোধ করার পরও বাদীনি তার প্রাপ্য অংশ ১নং আসামীকে দলিল করে না দেওয়ায় ১নং আসামী বাদীনির জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট এর নাম ও জন্ম তারিখ জ্বালিয়াতি করে, এসএ খতিয়ান জ্বালিয়াতি করে আর এস ২৯০৭ দাগে বাদীনি ০.৭৫ অযুতাংশের মালিক হলেও মোয়াজিতে ১.৫ শতক উল্লেখ করে. এবং চৌহদ্দিতে বাদীনির ২৯০৭ দাগের চৌহদ্দি না দিয়ে আব্দুল হকের নামে র্আএস রেকর্ড হওয়া ২৯০৬ দাগের চৌহদ্দি উল্লেখ করে ১নং আসামী অন্য কোন মহিলাকে বাদীনি মোছাঃ রেহেনা আক্তার সাজিয়ে সাবরেজিষ্টারী অফিসে ৪২৭৬/১৮ইং হেবা দলিল সৃজন করে। উক্ত দলিল গোপন রাখতে গিয়ে ১নং আসামী বিগত ৫ বছর যাবত উক্ত দলিলের ভূমি নামজারী করে নাই। ২০২২ইং বাদীনি তার পিতার ওয়ারিশান সংগ্রহ করিয়া নোয়াপাড়া ভূমি অফিসে তার প্রাপ্য ২৯০৭ দাগের ৭৫ অযুতাংশ ও ২৯০৪ দাগের ৫০ অযুতাংশের ৩৫ বছরের খাজনা পরিশোধ করেন। পরবর্তীতে উক্ত (৫০+৭৫)= ১২৫ অযুতাংশ ভূমি তার ৩ জন নাবালক সন্তানের বরাবরে হেবা ৭৬৬০/২২ইং দলিলে হস্তান্তর করে দখল সমজাইয়া দেন। উক্ত সংবাদ পাইয়া ১নং আসামী ১৮২/২২ইং নামজারী মামলায় আবেদন করলে মাধবপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) উক্ত দলিল সঠিক না হওয়ায় ও বাদীনির আপত্তি থাকায় নামজারী আবেদন না-মঞ্জুর করেন। পরবর্তীতে বাদীনী তার না-বালক সন্তানের নামে নামজারী আবেদন করলে ১২৩৫/২২ইং নামজারী মামলায় মাধবপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) বাদীনীর না-বালক সন্তানদেও নামীয় নামজারী মঞ্জুর করেন। পরবর্তীতে বাদীনি তার সন্তানদের নামে হালসন পর্যন্ত খাজনাদি পরিশোধ করে যথারীতি ভোগ দখলে আছেন। পরবর্তীতে ১নং আসামী বাদীনির নাবালক সন্তানদের নামীয় নামজারী বাতিলের জন্য রিভিও আবেদন করলেও মাধবপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিভিও আবেদনটি খারিজ করেন।
এমতাবস্থায় স্থানীয় চেয়ারম্যান ও শায়েস্তাগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতির মধ্যস্থতায় কয়েকবার শালিস মীমাংসার বৈঠকে ১২ লাখ টাকা বাদীনিকে প্রদান করে বৈধ দলিল রেজিষ্ট্রি করার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে অঙ্গিকার নামায় স্বাক্ষর করলেও ১নং ও ৭নং আসামী উক্ত টাকা পরিশোধ করতে বিভিন্ন ঠালবাহানা করে যাচ্ছে। একই সাথে বাদীনিকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে হয়রানি কওে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রশাসন ও বিচার বিভাগের সহযোগীতা কামনা করছেন।

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.