শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৫১ পূর্বাহ্ন

শীতে যদি রাত কাটে হাকালুকিতে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ কর্পোরেট জীবনের অভ্যস্ততা নিজেকে খুব অসহায় মনে হতেই পারে। তখন মুক্তি পেতে মনে চায়। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে ঘুরে আসতে পারেন প্রাকৃতির লীলাভূমি সিলেট থেকে। শীতের আমেজটাকে একটু অন্যভাবে উপভোগ করতে চাইলে আপনার ভ্রমণ গন্তব্য হতে পারে সিলেটের হাওরগুলো।

সিলেটের প্রাকৃতির খ্যাতি বিশ্বজোড়া। এ অঞ্চলে অবস্থিত হাকালুকি হাওর। ঋতুর পালাবদলে প্রকৃতি যেমন রূপ বদলায়, তেমনি বদলায় হাকালুকির দৃশ্য। বর্ষায় সমুদ্র দর্শনের আনন্দ যেমন উপভোগ্য, তেমনি শীতেও হাওরের রূপ পর্যটকদের মন ভরিয়ে দেয়।শীতে নানা ফসলে ভরে উঠে হাওরের বুক। বিভিন্ন বিলে মাছ ধরার দৃশ্যও উপভোগ্য। তবে শীতে হাকালুকির প্রধান আকর্ষণ অতিথি পাখি। জীবন বাঁচাতে হিমালয়-সাইবেরিয়ার বরফ অঞ্চল থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি এসে ভিড় করে এই হাওরের বিলগুলোতে। তাদের কিচিরমিচিরে ভিন্নমাত্রা যোগ হয়। এ দৃশ্য দেখতে বাড়ে পাখি প্রেমিদের পদচারণা।

১৮ হাজার ১১৫ হেক্টর আয়তনের হাকালুকি হাওরের অবস্থান সিলেট বিভাগের দুটি জেলার ছয়টি উপজেলায়। এই হাওরে আছে ২৩৮ টির মতো ছোটবড় বিল। প্রবাহিত হয়েছে পাঁচটি ছোট নদী। এগুলো অনেকটা বড়সড়ো খালের মতো, তবে খরস্রোতা।শীতে দুপুরের পর থেকে বিকেল পর্যন্ত অতিথি পাখিদের জলকেলি দেখা যায়। এখনো দেখা যাবে রাজসরালি, বালিহাঁস, ভূতিহাঁস, পানকৌড়ি, ল্যাঞ্জাহাঁস, গুটিঈগল ইত্যাদি।

হাকালুকির বিভিন্ন বিলে মাছ ধরার দৃশ্যও উপভোগ করা যায়। চাইলে সুলভ মূল্যে এখান থেকে মাছ কেনা যাবে। এই হাওরে বোয়াল, পাবদা, রুই, চিতল, বাউশ, মৃগেল, আইড়, বাইম ইত্যাদি মাছ বেশি মেলে।

পাখি বিল আর মাছ ছাড়াও বিশাল হাওরের বুকে বুরো ধানের সবুজ ভেদ করে কোথাও কোথাও উঁকি দেয় সাদা বক। এখানে বোরো ছাড়াও শীতকালীন সবজি হয় প্রচুর। সরিষা, তিল, তিশি ইত্যাদি তৈলজাত শষ্যের ক্ষেতে হলুদ সাদা সবুজেও মুগ্ধ হবেন যেকেউ। হাঁসের খামার, গরু-মহিষের বাথানও দেখা যাবে। কোনো কোনো বাথানে উৎপাদন হয় দুধ। চাইলেই সুলভে খেতে পারেন গরু বা মহিষের একদম টাটকা দুধ। কপাল ভালো হলে পেতে পারেন ফ্রি। বাথান মালিকরা খুবই অতিথি পরায়ণ।যেভাবে যাবেন

ঢাকার কমলাপুর ও ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন তিনটি ট্রেন ছাড়ে সিলেটের উদ্দেশে। ভাড়া ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা। সিলেটের আগের স্টেশন মাইজগাঁও নেমে সেখান থেকে মাত্র সাত কিলোমিটার ঘিলাছড়া জিরো পয়েন্ট। সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ভাড়া নেবে ১০০ থেকে দেড়শ টাকা। এ ছাড়া বাসে ৩০০ থেকে ৮০০ টাকায় যেতে পারেন সিলেটের কদমদলী এলাকায়। সেখান থেকে ফেঞ্চুগঞ্জে যাত্রীবাহী বাসে ভাড়া নেয় ৩০ টাকা, সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। আর ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ১০০ থেকে দেড়শ’ টাকা রিজার্ভে যেতে পারেন ঘিলাছড়া জিরো পয়েন্টে। প্রবেশ করতে পারেন হাওরে। শীতে হাওরের বুকে হাঁটতে হাঁটতে যেতে পারেন গভীর হাওরে। ছোট নদীর বুক দিয়ে চলে ছোট ছোট ইঞ্জিনচালিত নৌকা।

যেখানে থাকবেন

হাওরে থাকতে হলে বিলের ইজারাদের খুপড়িঘরে কম খরচে থাকতে পারেন। তবে নিজস্ব তাঁবু খাটিয়েও থাকা যায়। হাওরে জোসনা রাত দারুণ উপভোগ্য। আর সিলেট মহানগরীর জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, মিরাবাজার দরগাগেইট আম্বরখানা এলাকায় বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল আছে। এসব হোটেলে থাকতে জনপ্রতি খরচ পড়বে ২০০ থেকে ৬০০ টাকা। এ ছাড়া সিলেটে বেশ কিছু অভিজাত আবাসিক হোটেল আছে।

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.