শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:১২ পূর্বাহ্ন

হবিগঞ্জে ক্রমেই বাড়ছে ‘অনলাইন জুয়া’ ধ্বংসের পথে যুবসমাজ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ হবিগঞ্জে দিন দিন বাড়ছে অনলাইন জুয়া খেলা। এতে ধ্বংসের পথে ধাবিত হচ্ছে যুব সমাজ। এই অনলাইন বেটিং সাইটে জুয়া খেলে পথে বসেছেন অনেকেই।
এসব বেটিং সাইটগুলো অনলাইনে হওয়াতে শুধুমাত্র মোবাইল ফোন ব্যবহার করেই তাতে বিভিন্ন ধরনের জুয়ায় মেতে উঠছে তারা। বিকাশ এবং রকেটের মাধ্যমে টাকা আদান প্রদানের সুযোগ থাকায় সহজেই এই খেলায় অংশ নিচ্ছেন যুবকরা। অনেকেই জুয়ার টাকা যোগাড় করতে
তারা বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন অ্যাপে জুয়া চক্রের একাধিক সদস্য গ্রেপ্তার হলেও ধরা ছোঁয়ার বাহিরে রয়ে গেছে অনেকেই। আবার অনেকেই স্থানীয় নেতাদের আতাত করে দেদারছে চালিয়ে যাচ্ছেন এ খেলা। জেলার বিভিন্ন এলাকায় নানা-বয়সী মানুষ এখন এ খেলায় জড়িত।
জানা যায়, করোনা মহামারির কারণে অনেকেই কাজ হারিয়ে মোবাইলফোনে অনলাইন জুয়া খেলে থাকেন। এ ছাড়া একটি বড় সংখ্যক মানুষ যারা একসময় হবিগঞ্জের অলিগলিতে জুয়া খেলতেন এমন ব্যক্তিরাও এই অনলাইন জুয়ার দিকে ঝুঁকছেন। নাইন উইকেটস ডট কম, স্কাইফেয়ার এবং বেট ৩৬৫সহ বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ জুয়া খেলার জন্য জুয়াড়িদের কাছে বেশি জনপ্রিয়।
এক্ষেত্রে জুয়াড়ি প্রথমে তার নিজস্ব একটি ইমেইল আইডি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে থাকেন। এরপর দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে অনলাইনের মাধ্যমে জুয়ায় অংশ নিতে পারেন।
সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া একাধিক জুয়াড়ির দেয়া তথ্য মতে গোটা দেশজুড়ে রয়েছে অনলাইন জুয়ার নেটওয়ার্ক। রাজধানীর পর মফস্বল এলাকায় এখন জুয়াড়িদের কাছে জনপ্রিয় এই অনলাইন অ্যাপ। যেখানে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে রয়েছেন নানা বয়সীরা।
বিপিএল, আইপিএল, ক্রিকেটসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ম্যাচকে কেন্দ্র করে চলে এই জুয়ার আসর।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, চক্রটি নিয়ন্ত্রণ করে দেশের বাইরে থাকা মূলহোতা বা সুপার এডমিন। সুপার এডমিন সর্বপ্রথম টাকা দিয়ে এই অ্যাপ ক্রয় করে পর্যায়ক্রমে একটি বড় নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে। তাদের মধ্যে কেউ সুপার, কেউ মাস্টার এজেন্ট।
এ ছাড়া রয়েছে লোকাল এজেন্ট। এক্ষেত্রে নবাগতরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি আইডি লাগবে মর্মে পোস্ট লিখে থাকেন। পরবর্তীতে জুয়ার মূল নিয়ন্ত্রণ যার হাতে থাকে অর্থাৎ এডমিন একজন এজেন্ট নির্ধারণ করে দিলে তার মাধ্যমে আইডি খুলে শুরু হয় জুয়ার আসর। শর্ত থাকে নির্দিষ্ট এজেন্টের বাইরে তিনি খেলতে পারবেন না। তাহলে আইডি রিজেক্ট হয়ে যাবে।
এসব জুয়ার ক্ষেত্রে কয়েন বা রেটিং হিসেবে প্রয়োজন হয় পিবিইউ (পার বেটিং ইউনিট)। যার প্রতিটি ইউনিটের মূল্য এক থেকে দুই’শো টাকা। নিবন্ধন শেষে টাকা দিতে হয় লোকাল এজেন্টকে। সেখান থেকে টাকাটা চলে যায় তাদের মাস্টার এজেন্টের কাছে।
পরবর্তী ধাপে সুপার এজেন্টের মাধ্যমে নানা হাত ঘুরে চূড়ান্ত ভাবে টাকা চলে যায় বিদেশে অবস্থান করা মাস্টারমাইন্ড বা সুপার এডমিনের কাছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, অনলাইন অ্যাপ ব্যবহারকারীদের অধিকাংশের বয়স ৩০-এর মধ্যে। অনেকটা মাল্টি পারপাস বা এমএলএম ব্যবসার মতো চক্রের মূলহোতারাই মূলত নিজেদের মধ্যে এজেন্ট তৈরি করে।
এ সকল এজেন্টরা আবার সাব এজেন্ট চক্র তৈরি করে। রয়েছে নিজস্ব শেয়ারহোল্ডার। মোবাইলের অ্যাপে থাকা পয়েন্ট বা রেটিংকে তারা কখনো ডলার, পাউন্ড, বিকাশ, ক্ষেত্র বিশেষে নগদ টাকা থেকে শুরু করে যেকোনো কারেন্সিতে ট্রানজেকশন করে থাকে।
রেটিং অনুযায়ী সাব এজেন্ট মূল এজেন্টের কাছ থেকে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে ক্রয় করে থাকে। এভাবে বহু শাখা প্রশাখা এবং সার্কেলের সন্ধান পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.