শিল্পকারখানার বর্জ্য গিলে খাচ্ছে মাধবপুরে রাজখাল, পানি যেন কালো ছিটা
ময়লা-আবর্জনা ও ক্যামিকেলের পানিতে দূষিত হচ্ছে মাধবপুর উপজেলার সাতপাড়িয়া গ্রামের রাজখাল। শিল্প কারখানার দূষিত বর্জ্য নিক্ষেপে কালো রং ধারণ করেছে খালের পানি। এতে কৃষি কাজে খালের পানি ব্যবহারে অনপযোগি হয়ে পড়েছে।
আর দূষিত পানিতে নেমে মারা যাচ্ছে হাস-মোরগ। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তাদের দাবী, শিল্পবর্জ্যরে দুষনে দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়। এতে চরম ক্ষতির মুখে পড়ছেন তারা। স্থানীয়রা জানান, রাজখালের সাথে রয়েছে মানুষের দীর্ঘ জীবনের স্মৃতি।
এক সময়ে খালে প্রচুর পরিমানে মাছ পাওয়া গেলেও এখন বিলুপ্ত। সময়ের ব্যবধানে বিকৃত হয়েছে খালের পরিবেশ ও প্রতিবেশ অবস্থা। কৃষি কাজে পানি ব্যবহারে অনপযোগি হয়ে পড়েছে। আর দূষিত পানিতে নেমে প্রায়ই মারা যাচ্ছে গবাদি পশু ও হাস-মোরগ।
এই খালটি সাথে যুক্ত রয়েছে কয়েকটি শিল্পকারখানার ড্রেন। এসব ডেন দিয়ে বিষাক্ত ক্যামিকেল ও দূষিত বর্জ্য প্রবেশ করছে খালে। এতে কালো রং ধারণ করেছে খালের পানি। কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে সৃষ্টি হয়েছে দূষণের এমন ভয়াবহ চিত্র। খালের পানি যেন গাঢ় কালো ছিটায় পরিণত হয়েছে। তাদের অভিযোগ, বিভিন্ন সময় নদীর পানিতে নেমে হাঁস-মোরগ মারা যায়। বিভিন্ন সময় পানি ব্যবহারে দেখা দিচ্ছে রোগ-বলাই।
এ বিষয় নিয়ে কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হলেও নেয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের যথাযথ তদারকি থাকার কথা থাকলেও তারা তদারকি না করে বর্জ্যগুলো খাল নদী জলাশয়ে নিক্ষেপ করছে। এতে দুষনের কবলে পড়ে অস্তিস্থ সংকটে পড়েছে খালটি। খালের দূষণ রোধে প্রশাসনকে দ্রæত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
সম্প্রতি এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে শিল্পবর্জ্য দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছে ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার। পরিদর্শনকালে রাজখালের এই দূষণের ভয়াবহ চিত্র দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রতিনিধি দল। এ সময় তারা শিল্পদূষণ বন্ধে জনসম্পৃক্ত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহŸান জানান।
পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘পরিবেশ বিপর্যয় এমন এক মানবিক সংকটে রূপ নিয়েছে যে এখানে গবাদি পশু, হাঁস-মোরগ মারা যাচ্ছে।
পরিদর্শনকালে দেখা যায়, খালের পাশ^বর্তী মানুষ মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। এ থেকে উত্তরণের প্রয়োজন, মানুষকে বাঁচানো দরকার। তিনি বলেন, ‘মানুষের জন্য কলকারখানা, কলকারখানার জন্য মানুষ নয়। সুতরাং যারা কলকারখানা তৈরী করে মুনাফা লাভের কাজ করছেন। তাদের প্রতি যে, নীতি নির্ধারনী দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের যথাযথ তদারকি থাকার কথা, সে তদারকি না থাকার কারনে তারা বর্জ্যগুলো খাল নদী জলাশয়ে নিক্ষেপ করছে।
এতে দুষনের কবলে পড়ে অস্তিস্থ সংকটে পড়েছে রাজখাল। খালটি রক্ষা করতে হলে কলকারখানার বর্জ্য বন্ধ রাখতে হবে’।
বাংলাদেশ খোয়ই রিভার ওয়াটারকিপার-এর সমন্বয়ক ও ধরা’র সদস্য সচিব শরীফ জামিল বলেন, খালে বর্জ্য নিক্ষেপ করা আইনগত ভাবে অবৈধ। যে সব কারখানার বর্জ্য খাল দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, সেসব কারখানাকে চিহ্নিত করতে হবে। তিনি বলেন, ‘কৃষি জমি নষ্ট করে কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলা যাবে না। খাল-নদীর পানি নষ্ট করে কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। খালের দুষন রোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনে প্রশাসনকে কাজ করতে হবে’।
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় পরিচালক মোঃ ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, ‘খালের পানি স্যাম্পল সংগ্রহ করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে পরীক্ষা করে রিপোর্ট হয়েছে। যা মানব ও জলজ প্রাণী ও কৃষি কাজের জন্য উপযুক্ত নয়। যে সব কোম্পানী খালে বর্জ্য নিক্ষেপ করছে সেসব কোম্পানীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধিন রয়েছে’।