সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:১৯ অপরাহ্ন

খবরের শিরোনাম:
১২ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজনগরে সড়ক সংস্কারের ভিত্তিপ্রস্তর করলেন এমপি জিল্লুর রহমান আওয়ামী লীগ মানুষের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করেছে -এমপি আবু জাহির ভারতের বিপক্ষে হার দিয়ে সিরিজ শুরু বাংলাদেশের সিলেটে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু কালবৈশাখী ঝড়ে লন্ডভন্ড শ্রীমঙ্গল রাজনগরে চোলাই মদসহ আটক -১ দেড়শ রানেই ভারতকে আটকাল বাংলাদেশ হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলেয়া আক্তারকে শায়েস্তাগঞ্জের বাণীর সম্মাননা প্রদান শায়েস্তাগঞ্জ নদীতে গোসল করতে নেমে ২ ভাই নিখোঁজের পর একজনের লাশ উদ্ধার আজমিরীগঞ্জে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রশিক্ষন না করানো ও সম্মানহানিকর বক্তব্যের অভিযোগ

আজমিরীগঞ্জ ফুটপাতে পিঁড়িতে বসেই চুল-দাড়ি কাটেন নরসুন্দর মানিক

আজমিরীগঞ্জ প্রতিনিধিঃ হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের বিরাট (উজানপাড়া) গ্রামের বাসিন্দা মানিক চন্দ্র শীল (৭০)। পাঁচ দশক ধরে পৌরসদর বাজারের ফুটপাতে পিঁড়িতে বসিয়ে মানুষের চুলদাড়ি কেটে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি। পৈতৃক সূত্রে শেখা এই পেশায় পুঁজি বলতে নিজের রয়েছে কাঠের তৈরি দুটো পিঁড়ি, চিরুনি, ক্ষুর, কাঁচি, ফিটকিরি আর সন্তা দামের সেভিং ক্রিম। বয়সের ভারে অনেকটাই নুয়ে পড়া এই প্রবীণ এখন আর আগের মতো দিনভর কাজ করতে পারেন না।

যুগ বদলের সঙ্গে পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে সবখানে। মানুষের আচার-আচরণ থেকে শুরু করে পুরনো দিনের জীবনাচারণ ও ঐতিহ্যও বিলুপ্ত হচ্ছে। তেমনি কালক্রমে হারিয়ে যেতে বসেছে পিঁড়িতে বসে ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দরের সুনিপুণ হাতে চুল ও দাড়ি কাটার দৃশ্য। সময়ের আবর্তনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অন্য অনেক পেশার মতোই নরসুন্দরের এই পেশাও বদলে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে আধুনিকার ছোঁয়ায় ফুটপাতে পিঁড়িতে বসে ক্ষুর কর্ম করানোর ক্রেতাও প্রায় শূন্যের কোটায়। এই অবস্থায় পিঁড়িতে বসিয়ে ক্ষুর কর্মের ভাটায় শেষ সময় পার করেছেন মানিক চন্দ্র শ

মানিক শীলের মতোই একই জায়গায় জলসুখা ইউনিয়নের মনোরঞ্জন শীলও একই ভাবে শেষ সময় পার করছেন পিঁড়িতে বসিয়ে ক্ষুর কর্মের। সরেজমিনে পৌরশহরের গরুর বাজার এলাকায় যাওয়ার পথে উপজেলা প্রেসক্লাবের পাশে দেখা যায়, কাটের পিঁড়িতে বসে চুল-দাড়ি কাটছেন মানিক চন্দ্র শীল।

আলাপচারিতায় মানিক চন্দ্র শীল কালবেলাকে জানান, স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে নিজের বয়স যখন ১৭ কি ১৮ বছর, তখন থেকে বাবার হাত ধরে পিঁড়িতে বসিয়ে এই নরসুন্দরের কাজ শুরু করেন তিনি। সেই সময়ে গঞ্জের এই বাজারের সাপ্তাহিক দুটি হাটবারসহ (রবি ও বৃহস্পতিবার) সপ্তাহের প্রতিদিনই হাজার হাজার লোকের সমাগম হতো। কাজও ছিল প্রচুর। কিন্তু দিন বদলের স্রোতে বিভিন্ন স্থাানে গড়ে উঠেছে নানান আধুনিক প্রযুক্তির সরঞ্জামসহ নরসুন্দরের দোকান। সেখানেই এখন মানুষ চুল কাটা, দাড়ি কাটার কাজ করেন। হাতে গোনা কিছু নিম্নআয়ের মানুষ আমাদের দিয়ে কাজ করান। এতে কোনো দিন ইনকাম হয় দুই থেকে তিনশ টাকা আবার কোনদিন শ‘দেড়েক টাকার কাজও হয় না। ছেলে আধুনিক নরসুন্দরের একটি দোকানে কাজ করে তাদের সহযোগিতা আর নিজের উপার্জনে কোনো রকমে চলে দিনতিপাত। এখন যে যন্ত্রপাতি আর জিনিসপত্র সেলুনে ব্যাবহার হয় আমাদের সময় এগুলো ছিল কল্পনার বাইরে।

মনোরঞ্জন শীল বলেন, ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধইরা টুলে বসাইয়া এভাবেই এই বাজারে নরসুন্দরের কাজ করতাছি। আগে এই বাজারে মানুষ আইতো সব জায়গা থাকি। এখন সব জাগাত ভালা দোকান হইছে। এখন আর মাইনষে বইয়া চুল, দাড়ি কাটে না তেমন। ছেলেরা বাজারে সেলুনে কাজ করে তাদের দিয়েই সংসার চলে। তারাও বিয়েশাদি করেছে, এখন নিজের ভার নিজেকেই বইতে হয়।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আকবর মিয়া জানান, আমরা কৈশোর থেকে দেখে আসছি এই সদর বাজারে এই বয়স্ক দুজনই আছেন যারা পিঁড়িতে বসিয়ে আজও নরসুন্দরের কাজ করছেন। উনাদের পর এই বাজারে পিঁড়িতে বসিয়ে চুল, দাড়ি কাটার আর কেউ থাকলো না।

রাজু ইসলাম নামে অপর একজন কালবেলাকে বলেন, ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে হাটে যেতাম। চুল কাটাতে তাদের দায়িত্ব দিয়ে বাবা বাজারের সব কাজ শেষে আসতেন। এখন আর তাদের কাছে চুল দাঁড়ি কাটা হয় না। ছেলে মেয়েদের চুল ও কাটায় আধুনিক সেলুনগুলোতে। আমরা এই দৃশ্য নিজের চোখে দেখলেও আগামী সময়গুলোতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এই বিষয়টা নিছক গল্পই মনে হবে।

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.