শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০১:২১ অপরাহ্ন

৬ষ্ঠ ধাপের ইউপি নির্বাচনে হবিগঞ্জে ইভিএমে উৎসাহ-ইভিএমে দুর্ভোগ

শামীম আহমেদঃ হবিগঞ্জ জেলার বাহুবলে ৭ টি ইউনিয়ন ও শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার একমাত্র ইউনিয়ন শায়েস্তাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্টিত হচ্চে।হবিগঞ্জের বাহুবল ও শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় ৮টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ইভিএমে স্বল্প সময়ে স্বস্তিতে ভোট দিয়ে বেশিরভাগ ভোটার উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেও কিছু বয়স্ক ভোটার ‘বিপত্তির’ কথাও বলেছেন।বাহুবলের ৭ ইউনিয়নে আজ ভোট। উপজেলার ৭৬ কেন্দ্র প্রস্তুত। উপকরণ পৌঁছেছে যথারীতি। প্রার্থীরাও সেরে নিয়েছেন শেষ মুহূর্তের প্রচারণা। তবে, ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)-এ অনুষ্ঠিতব্য এ ভোটকে ঘিরে রয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। একে বারেই নতুন এ পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা দিতে নির্বাচন কমিশন গত শনিবার সবকটি কেন্দ্রে মক (প্রশিক্ষণ) ভোটের আয়োজন করলেও সাড়া মেলেনি ভোটারদের।আজ সোমবার বাহুবল উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ৭৬টি কেন্দ্র ও শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ১টি ইউনিয়নের ৯টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।৬ষ্ঠ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ৮নং শায়েস্তাগঞ্জ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বর্তমান চেয়ারম্যান মো. বুলবুল খাঁন আনারস মার্কায় ও তার স্ত্রী আছমা আক্তার লাকী চশমা মার্কা ও আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী আব্দুস সামাদ জাতীয় পার্টির লাঙ্গলের প্রার্থী মখলিসুর রহমান, স্বতন্ত্র পার্থী আমিন আহমেদ খান রাজিব ঘোড়া মার্কায় নির্বাচন করছেন।সকালে আট নম্বর শায়েস্তাগঞ্জ ইউনিয়নের বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়েছেন কয়েকজন চেয়ারম্যান ও সাধারণ ওয়ার্ডের সদস্য পদপ্রার্থী। এ সময় তারা কোথাও কোথাও ভোট প্রয়োগে ধীর গতি দেখে গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেন, ‘ইভিএম জটিলতার কারণে এমনটি হচ্ছে’।তবে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তারা বলছেন, ইভিএম নিয়ে কেউ অভিযোগ করেননি। অনেকের বুঝতে অসুবিধা হলে তাদেরকে প্রশ্ন করছেন, সমাধানও হয়েছে। ভোট হচ্ছে স্বাভাবিকভাবে।

পশ্চিম বড়চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা কনিক চন্দ্র সমীর জানান, এ কেন্দ্রের দু’টি বুথে সকাল সোয়া ১১টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ১০০টি। তবে যত সময় যাচ্ছে ভোটের গতি বাড়ছে।

বুথে দায়িত্বপ্রাপ্তরা বলেন, ভোটাররা ভোট দিতে গিয়ে অনেক সময় নিয়ে নিচ্ছেন। আমরা বাইরে থেকে বলে দেওয়ার পরেও তারা বুঝতে পারছেন না। আবার অনেকে আছেন এক মিনিটের মধ্যে ভোট কাস্ট করে চলে যাচ্ছেন।

কেন্দ্রে ভোট দিতে এসেছিলেন সোহানা আক্তার। তিনি দুই দফায় চেষ্টা করেও ভোট দিতে পারেননি। কারণ তার আঙুলের ছাপ মিলছিল না। এই প্রক্রিয়ায় কেটে যায় ২০ মিনিট। পরে নির্বাচন কমিশনের অপারেটর এসে সোহানার ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।সকালে ভোট শুরুর পর এই কেন্দ্রে ভোট দিতে এসে নিজের পছন্দের প্রতীক খুঁজে পাচ্ছিলেন না এক নারী। পরে সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা নিজে কালো কাপড়ে ঘেরা ঘরে ঢুকে তাকে প্রতীক খুঁজে পেতে সহযোগিতা করেন। অবশ্য অধিকাংশ ভোটারকে দেখা গেছে সহজেই ইভিএমে ভোট দিয়ে বেড়িয়ে যেতে।

মড়রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান সোহেল বলেন, আঙুলের ছাপ না মিললে শতকরা এক শতাংশ ভোটারের ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থায় ভোট গ্রহণের নিয়ম রয়েছে। কিন্তু আমার বুথে অধিকাংশই বয়স্ক ভোটার। অনেকরই আঙুলের ছাপ মিলছে না। এ কারণে ভোটগ্রহণে বিলম্ব হচ্ছে।এ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা বলেন, সকাল সোয়া ১২টা পর্যন্ত ভোট দেওয়া হয়েছে ৩১০টি। এ কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ১৪০টি। আমার কেন্দ্রে যেভাবে ভোট পড়ছে তাতে আমি সন্তুষ্ট।কেউ যদি নিজের মতো প্রতীক পছন্দ করে ভোট দিতে না পারেন তাহলে নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত অন্য কারো সহযোগিতা নেওয়ার সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে তিনি হয়ত আত্মীয়-স্বজনের সহযোগিতা নিতে পারেন।কেন্দ্রটিতে নিজের ভোট দিয়ে উচ্ছ্বসিত হাবিবা আক্তার বলেন, ইভিএমে আগে ভোট দিইনি, এবার দিলাম। ভোট দিয়ে খুবই ভালো লাগল। শান্ত পরিবেশে ভোট হচ্ছে।জবেদা খাতুন নামে আরেকজন বলেন, তিনি প্রায় ২০ মিনিট চেষ্টার পরও আঙুলের রেখা না মেলায় ভোট দিতে পারেননি। এজন্য ফিরে গেছেন।হবিগঞ্জ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাদেকুল ইসলাম জানান বলেন, ইভিএম ভোট দিতে যেন বিপত্তি না বাধে সেজন্য ভোটের একদিন আগে মক (প্রশিক্ষণ) ভোট নেওয়া হয়েছে। আশা করি মানুষদের মধ্যে ভোট গ্রহণে মেশিনের ব্যবহারের সংকোচ কমেছে। এছাড়া কেন্দ্রগুলোতে নির্বাচন কমিশনের কারিগরি দল রয়েছে। সমস্যা হলে তারা সঙ্গে সঙ্গে সমাধান করে দিচ্ছেন।নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাহুবল উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৪০ হাজার ৭৬০ জন ও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৪৬৮ প্রার্থী। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৪০, সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য ১০২ ও সাধারণ ওয়ার্ড সদস্যের পদে ৩২৬ জন।শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার আট নম্বর শায়েস্তাগঞ্জে ৯ হাজার ৮৮২ জন ভোটার। এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ৪৭ জন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৫, সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য ৮ ও সাধারণ ওয়ার্ড সদস্যের পদে ৩৪ জন।

ব্হুবল উপজেলার ৭ ইউনিয়নে সর্বমোট ভোট ১ লাখ ৪০ হাজার ৭৭০। তন্মধ্যে পুরুষ ৭২ হাজার ৭১২ ও মহিলা ৬৮ হাজার ৫৪। এবার নির্বাচনে ৪০ চেয়ারম্যান, ১০২ সংরক্ষিত নারী সদস্য ও ৩২৬ সাধারণ সদস্য পদপ্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন।উপজেলা নির্বাচন অফিস জানিয়েছে, আজ সোমবার ভোটগ্রহণ নির্বিঘœ করতে ১০ ম্যাজিস্ট্রেট, বিজিবি’র ৮০, র্যাব-এর ৪৩ পুলিশ-এর ৮৬০ ও আনসার বাহিনীর ১,২৯২ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়াও ইভিএম মেশিন পরিচালনায় অভিজ্ঞ ২ জন করে অপারেটর প্রতিটি কেন্দ্রে এবং প্রতি তিন কেন্দ্রের জন্য একটি করে ইভিএম বিশেষজ্ঞ টিম টিম সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে। উপজেলার ৭৬ কেন্দ্রের মধ্যে অতি ঝুকিপূর্ণ ৩৪টি এবং ২২টিকে ঝুকিপূর্ণ কেন্দ্র ধরা হয়েছে।১নং স্নানঘাট ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে হারুন অর রশীদ (নৌকা), মোঃ তাজুল ইসলাম (আনারস), মোঃ মুদ্দত আলী এডভোকেট (মটর সাইকেল), মনোরঞ্জন রায় (চশমা) ও মোহাম্মদ তোফাজ্জল হক (ঘোড়া) প্রতীক পেয়েছেন। এছাড়াও সংরক্ষিত মহিলা পদে সদস্য ১৪ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৩৯ জন প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন। এ ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ১৮ হাজার ৬৫৯ জন। তন্মধ্যে পুরুষ ৯ হাজার ৫১৪ ও মহিলা ৯ হাজার ১৪৫ ভোট।২নং পুটিজুরী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে মোঃ মুদ্দত আলী (নৌকা), খোরশেদ আলম (ঘোড়া), শাহ ফয়জুল কবির (আনারস) ও মঈন উদ্দিন আরিফ (চশমা) প্রতীক পেয়েছেন। সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১৪ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৪৯ জন প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন। এ ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ১৮ হাজার ৮৫১ জন। তন্মধ্যে পুরুষ ৯ হাজার ৮৬৫ ও মহিলা ৮ হাজার ৯৮৬ ভোট।৩নং সাতকাপন ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নারায়ন চন্দ্র পাল (নৌকা), শাহ আবদাল মিয়া (লাঙ্গল) মোঃ আব্দুর রেজ্জাক (আনারস), ফজলুল হক (ঘোড়া), আজিজুর রহমান তালুকদার (মোটর সাইকেল), মোহাম্মদ ছায়েদ আহম্মদ (দেওয়াল ঘড়ি) প্রতীক পেয়েছেন। এছাড়াও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১৩ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৪৫ জন প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন। এ ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ২৩ হাজার ১২৯ জন। তন্মধ্যে পুরুষ ১২ হাজার ৯৩ ও মহিলা ১১ হাজার ৩৬ ভোট।৪নং বাহুবল ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে মোঃ রিফাত ইসলাম মুরাদ (নৌকা), নূর উদ্দিন মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (লাঙ্গল), আজমল হোসেন চৌধুরী (ঘোড়া) ও মোঃ কাজল তালুকদার (আনারস) প্রতীক পেয়েছেন। এছাড়াও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১৩ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৫০ জন প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন। এ ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ২১ হাজার ৪১২ জন। তন্মধ্যে পুরুষ ১১ হাজার ১০৩ ও মহিলা ১০ হাজার ৩০৯ ভোট।৫নং লামাতাসী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে সাইফুর রহমান জুয়েল (নৌকা), আ.ফ.ম. উস্তার মিয়া তালুকদার (লাঙ্গল), হাবিবুর রহমান চৌধুরী টেনু (চশমা), আব্দুল কাইয়ূম (চেয়ার), এস.এম ফারুক (ঘোড়া)ও শাহীন মিয়া (আনারস) প্রতীক পেয়েছেন। এছাড়াও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১৮ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৪৩ জন প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন। এ ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ১৬ হাজার ৮৩৩ জন। তন্মধ্যে পুরুষ ৮ হাজার ৫৯৭ ও মহিলা ৮ হাজার ২৩৬ ভোট।৬নং মিরপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে মোঃ সাইফুদ্দিন (নৌকা), ডা. মোঃ রমিজ আলী (লাঙ্গল), মোঃ নূরুল হক আছকির (আনারস), আব্দুল আউয়াল (মোটর সাইকেল), মোঃ শামিম আহমেদ (চশমা), মীর একেএম জমিলুননব্বী (টেবিল ফ্যান), মোঃ হেলাল মিয়া (অটোরিক্সা), মোঃ আব্দুল মুতালিব রুবেল (ঘোড়া) ও মোঃ শামীম মিয়া (টেলিফোন) প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন। এছাড়াও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১১ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৩৯ জন প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন। এ ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ১৮ হাজার ১০৬জন। তন্মধ্যে পুরুষ ৯ হাজার ২০৩ ও মহিলা ৮ হাজার ৯০৩ ভোট।

৭নং ভাদেশ্বর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে কামরুজ্জামান (নৌকা), মোঃ শাহাব উদ্দিন (হাতপাখা), মোঃ আব্দুর রউফ বাহার (চশমা), মোঃ তাজুল ইসলাম চৌধুরী (আনারস), মোঃ মাখন মিয়া (মোটর সাইকেল) ও মোঃ জুনায়েদ মিয়া (ঘোড়া) প্রতীক পেয়েছেন। এছাড়াও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১৯ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৬১ জন প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন। এ ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ২৩ হাজার ৭৮০ জন। তন্মধ্যে পুরুষ ১২ হাজার ৩৩৭ ও মহিলা ১১ হাজার ৪৪৩ ভোট।উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, সুষ্ঠু, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য সকল ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। উপজেলার ৭৬টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫৬টি কেন্দ্রকে ঝুকিপূর্ণ ধরেই সেই ভাবেই প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। নির্বাচনী মাঠে ৪ স্থরের নিরাপত্তা বাহিনী সার্বক্ষণিক কাজ করবে। আজ সোমবার সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে ৪টা পর্যন্ত চলবে।

 

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.