সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৪৫ পূর্বাহ্ন

খবরের শিরোনাম:

তাল নিরাক ———-

মোস্তফা মঈন
এ শহরে আর নেশা হয় না
.
ইট পাথরের ঘষা খেতে খেতে
এ শহরে তোমার উপচে পড়া হাসিও এখন পাথর হয়ে যাচ্ছে। হৃদয় বলে যা কিছু ছিল-
দিগন্ত ব্যাপি তোমার দৃষ্টি গুম হয়ে যাচ্ছে প্রতিরাত।
.
তাই সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে নদী ধান ও পাখিদের উদ্দেশে উড়ন্ত চুমু।
আমি এ শহর ছাড়বই।
সাঁইডুলি নদীর ধারে গাঢ় লাল হয়ে ফোটে থাকা অশোক বৃক্ষের তলায় তোমাকে নিয়ে মাটির পাঁচিলে ঘেরা একটা ঘর বাঁধবই।
.
জ্যৈষ্ঠের আম কুড়ানির সুখ তুমি জানো?
উঠোনের কাঁঠালগাছতলায় বসে তালপাখা আর ভর দুপুরে হাঁড়ি ভরা মাঠা
আ! কী মজা!
পাটশাক আর টেপি চালের গরম ভাতে ননী তোলা কাঁচা ঘি।
.
আমার মন কোথায় যেন পড়ে থাকে।
বাড়ির দেউড়িতে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট বোন
অপরাজিতার ডাগর মেলা নীল চোখ।
সেই আমাদের পুকুরপাড়, জলে ঘাইমারা কাতলামাছ, জবাফুল, মাছরাঙা, চালতাফুল, তালগাছ, চালকুমড়োর মাচা, বাঁশের বেড়া, সাদা বকের গ্রীবাভঙ্গি, সবুজ ঘাস, ঝিঙেফুল, করমচা, ঘন হয়ে জমে থাকা থানকুনিপাতা, ফড়িঙ আর প্রজাপতিদের উড়াল…
বকুলগাছ তলায় ঝরে পড়া বকুলফুল। সার সার সুপারি গাছ-
.
ভরা বর্ষায় নদীর ঘাটে সাবান মাখা শরীর !
আ! চিত হয়ে সাঁতার কাটা মগড়া নদী…
তার তলপেটে ছড়াত ছড়াত বৈঠার ঘা- পালতোলা নৌকা আষাঢ় মাস নতুন বউ নাইওরি নেত্রকোণা।
গনেশ হাওড়ের শিঙড়া বিল কাঁপিয়ে বনঝোপে কোড়া পাখি ডাকছে ঠোভ ঠোভ ঠোভ…
.
এ শহরে আর নেশা হয় না।
তবু পেশার জন্য পড়ে থাকি ঘিঞ্জি গলির তেতলা বাড়িতে। উদ্দেশ্য তোমাকে নিয়ে জলবত তরলং বেঁচে থাকাই নয়, পেশা আর নেশাও এককথা নয়।
.
আমাদের বিলঝিল নদীনালা গাছে গাছে পাখিদের ওড়াউড়ি ডাকাডাকি
আর অঘ্রানের আধাপাকা ধানখেতের আলে আলে কার্তিকশাইল রতিশাইল ও কালাজিরা ধানের ঘ্রাণে
যে নেশা হয় তা তুমি জানোই না! আমি এ শহর ছাড়বই।
.
পৌষের পুলি আর কলসি ভরা খেজুরের রস তুমি জানো? মাঘের হিমতোলা বাতাস
আর পাহাড়ের কোমর বেয়ে যখন কুয়াশা নামে কাঁথামুড়ি দিয়ে হাঁটে শীতের সন্ন্যাস
পাতায় পাতায় শিশিরে তখন সূর্যের হাসি!
.
তুমি তো জানোই না বসন্তবাউরি!
আর কি যে পরান কাড়া কোকিলের ডাকাডাকি কুউউ কুউউ কুউউ…
আমাদের বসন্ত উৎসব – উদলা গায়ে উঠোন জুড়ে হলুদ রং এর ছড়াছড়ি-
পরবে নাকি বাসন্তি রং শাড়ি? খোঁপায় গুঞ্জা ফুল? চলো নেচে গেয়ে পরস্পর গাঁটছড়া বাঁধি।
.
কামিনীগাছের তলায় শরতের জোনাকি ফোটা চাঁদনি সন্ধ্যা তুমি দেখবে?
আকাশে পরিব্রাজক মেঘের টুঙিঘর?
ভ্রমণের থেকে দৃশ্যমান কোনো কবিতাও আমি দেখিনি। চলো বেরিয়ে পড়ি…
আমি সেই ইট পাথরের সাংঘর্ষিক শহরে আর যাব না।
.
ভোরবেলা শেফালি গাছের তলায় গিয়ে ঝরে পড়া শিউলি ফুল তুমি তুলবে?
শিশির ছোঁয়া শিউলির মন কাড়া ঘ্রাণের আনন্দই আলাদা।
এসো-
নৌকার পাটাতনে শোয়ে ভাগাভাগি করে নিই কাঁচুলি খোলা শিউলির ঘ্রাণ!
.
এই ছইতোলা নৌকাটায় বসে শেঁওলাইত বিলের এক আঁজলা টলোমলো জল তুমি ধরো।
দেখো বালিহাঁসগুলো, আর এই অফুরন্ত জলধোয়া বিশুদ্ধ বাতাস
শাপলা শালুক জলে ডোবা হিজলগাছ, আর থোকা থোকা কচুরি ফোটা বিল, পানকৌড়ি নদী কিচকিচ গাঙচিল
কী দারুণ! জলপারাবতেরা!
.
বর্ষায় ঝিঁউইড়া বিলে ঘাই মারা মাছের নেশা তুমি জানো?
আমি কোঁচ হাতে বেরিয়ে পড়েছি- এই যে ঘাটে বাঁধা ডিঙি নৌকাটা-
ভাদ্রের ভরা রোদের পর কী তাল নিরাক পড়েছে!
গণেশ হাওরের বড়বিলে শেঁওলাধরা ঘাসে খাজা খাওয়া মাছেরা…
.
শুধু তুমি পিঁড়িতে বসে পাটায় পিষে মসলাটা রাখ। এই আমি রুই মাছটা ধরে আনলাম।
…………
“ বাম হাতে সমুদ্র ঠেলছি “ কবিতার বই থেকে।

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.