শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৮:৪৬ অপরাহ্ন

বানিয়াচংয়ের শুটকি যাচ্ছে বিদেশে অর্ধশত ঘেরে শুটকি উৎপাদন শুরু

বানিয়াচং প্রতিনিধি: হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে অর্ধশতাধিক ঘেরে পুরোদমে শুরু হয়েছে শুটকি উৎপাদন। এবারও হবিগঞ্জ জেলার চাহিদা মিটিয়ে বানিয়াচং থেকে শুটকি বিভিন্ন জেলাতে বিক্রি হবে। এছাড়া এখানকার শুটকি বিদেশেও রপ্তানি হয়।

এই উপজেলায় উৎপাদিত শুটকি বিগত কয়েক বছর ধরে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কিশোরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন শুটকি আড়তের মালিক।

সরেজমিনে বানিয়াচংয়ের কয়েকটি জেলে পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে শুটকি শুকানোর কাজে ব্যস্ত জেলেরা। উপজেলার রত্না, ভাটিপাড়া,আতুকুড়া, মিনাটের গাং ও নদীর চরগুলোতে অর্ধশতাধিক শুটকি মহালে প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার জেলে শুটকি শুকানোর কাজ করছেন। শুটকি উৎপাদন শুরু হওয়ার পর তাদের এখন দম ফেরার ফুরসত নেই।

স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলেদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দেশের অন্যান্য এলাকার জেলেরা ইউরিয়া সার, লবন ও পাউডার দিয়ে শুটকি উৎপাদন করে। শুঁটকি উৎপাদনে কেমিক্যাল ব্যবহার করা স্বাস্থ্যের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি ওইসব শুটকি খেতেও কোন স্বাদ পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে বানিয়াচংয়ে শুটকি ঘেরগুলোতে বিষাক্ত ক্যামিকেল ব্যবহার না করায় এখানকার শুটকির স্বাদ ও কদর আলাদা। বানিয়াচংয়ের জেলে পল্লীগুলোতে শুকানো শুটকি ক্রয় করতে আশেপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে গুদাম মালিকরা দলে দলে হাজির হচ্ছেন এবং অনেকেই জেলেদের অগ্রীম টাকা দাদন হিসেবে দিয়ে যাচ্ছেন। ক্রেতাদের কাছে বানিয়াচংয়ের জেলে পল্লীর শুটকির আলাদা সুনাম থাকায় অন্যান্য এলাকায় শুটকি এখন বানিয়াচংয়ের শুটকি বলে চালিয়ে দেয়ার প্রবণতাও শুরু হয়েছে বাজারগুলোতে।

বানিয়াচংয়ের ভাটিপাড়ার সন্দ্বীপ শুটকি আড়তের মালিক নিখিল দাস জানান, আমাদের এখানে উৎপাদিত শুটকির মধ্যে লইট্যা, রুপচান্দা, পুটি, চিংড়ী, বাইম শুটকি অন্যতম। এসব এলাকার অন্যতম মানের শুটকি জেলার গন্ডি ছাড়িয়ে দেশের অন্যান্য জেলায় ও সরবরাহ করা হচ্ছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে তা এখন রপ্তানি হচ্ছে দুবাই, সৌদী আরব, কাতার, মালয়েশিয়া, ওমান, কুয়েতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। এ বছর ও দেশের চাহিদা মিটিয়ে বানিয়াচংসহ আশেপাশের এলাকার শুঁটকি ঘের থেকে লাখ লাখ টাকার শুটকি বিদেশে রপ্তানি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ঘের মালিকরা।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, জেলেরা গুদাম মালিকদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা দাদন এনে এসব শুটকি শুকানোর কারণে স্বল্প মূল্যে শুটকিগুলো গুদাম মালিকদের হাতে তোলে দিতে হয়। বানিয়াচংয়ের প্রায় তিন থেকে চার হাজার জেলের অন্যতম আয়ের উৎস এই শুটকি ঘের। শুকনো মৌসুমে শুটকি শুকিয়ে তা মালিকদের কাছে বিক্রি করে চলে তাদের জীবন জীবিকা।

এ বিষয়ে বানিয়াচং নন্দীপাড়া ভাদাউড়ির শুটকি ব্যবসায়ী ও মামু-ভাগিনা শুটকি আড়তের মালিক হেকিম উল্লাহ জানান, প্রতি বছর এ এলাকা থেকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। নদী ও হাওর থেকে আহরণ করা মাছ আধুনিক পদ্ধতিতে শুকানোর কোন ব্যবস্থা না থাকায় জেলেদের বাড়ির সামনে প্রখর রৌদ্রে শুটকি শুকাতে হয়। তাছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামীন সড়ক পথগুলো উন্নত না হওয়ায় উৎপাদিত শুটকি দুর-দুরান্তে সরবরাহ দিতে পরিবহন সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করে।

তিনি আরো বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থায় বা পরিবহন খরচ কম হলে এখানকার শুটকি কম খরচে বিভিন্ন জেলায় প্রেরণ করা যেত। শুটকি শুকানো কাজে নিয়োজিত জেলেরা সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে আরো ব্যাপক হারে শুটকি উৎপাদন করার মাধ্যমে তা বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলে তোলে ধরেন।

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.